স্বামী ঠিকমতো খরচ না দিলে স্ত্রী কী করবেন?
স্বামীকে স্ত্রী ও সন্তানের ন্যায্য ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। স্বাচ্ছল্য থাকা সত্ত্বেও এতে কার্পণ্য করা গুনাহের কাজ। কোনো স্বামী ঠিকমতো স্ত্রীর ভারণপোষণ না দিলে প্রয়োজনে স্ত্রী স্বামীর অগোচরে তার সম্পদ থেকে প্রয়োজনমতো নিয়ে খরচ করতে পারবেন—এমন নির্দেশনাও এসেছে হাদিসে।
স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করা একজন স্বামীর জন্য মৌলিক কর্তব্য হিসেবে গণ্য করেছে ইসলাম। সহিহ হাদিসে এসেছে, আমর ইবনুল আহওয়াস (রা.) বর্ণনা করেন, বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—তোমাদের ওপর স্ত্রীর হক হলো, তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদের ভরণপোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সজ্জার ব্যাপারে তোমরা তাদের প্রতি শোভনীয় আচরণ করবে। (ইবনে মাজা)
বিজ্ঞাপন
ইসলামের দৃষ্টিতে, স্ত্রীর প্রয়োজন পূরণ ও স্বামীর আর্থিক অবস্থার সামঞ্জস্য বিবেচনায় পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী সাধ্যমতো যথাযথ ভরণপোষণ দেওয়া স্বামীর জন্য ওয়াজিব।
যদি কোনো স্বামী আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়, কিন্তু পরিবারে ব্যয় করতে কার্পণ্য করে, তবে তা নিন্দনীয়। এই অবস্থায় স্ত্রী তাকে সতর্ক করতে পারে—কারণ আল্লাহ তাআলা তার পথে খরচকারীর জন্য প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সহিহ হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, প্রতিদিন সকালে দুই ফেরেশতা দোয়া করেন : হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (বুখারি ও মুসলিম)।
বিজ্ঞাপন
আরেক হাদিসে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন—হে আদমসন্তান, তুমি খরচ কর, আমি তোমার ওপর খরচ করব। (বুখারি ও মুসলিম)
পরিবারের জন্য খরচ করাকে নবী করীম (সা.) অতুলনীয় সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সহিহ মুসলিমে এসেছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দিরহামই খরচ করো না কেন, স্ত্রী-সন্তানের জন্য ব্যয় করা দিরহামই সর্বোচ্চ সওয়াবের।
যদি স্বামী অত্যন্ত কৃপণ হয় এবং স্ত্রী-সন্তানের প্রয়োজন ঠিকমতো পূরণ না করে, তাহলে শরীয়ত স্ত্রীকে অনুমতি দিয়েছে—প্রয়োজন অনুযায়ী স্বামীর অজান্তে তার সম্পদ থেকে নেওয়া যাবে এবং খরচ করা যাবে।
হাদিসে এসেছে: হিন্দ বিনতে উতবা অভিযোগ করলে যে আবু সুফিয়ান খুব কৃপণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যয় দেন না, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: তুমি ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন অনুযায়ী স্বামীর সম্পদ থেকে নিতে পার—যা ন্যায়সঙ্গত। (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলামের শিক্ষা হলো—আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করে সম্পদ দিয়েছেন, তিনি যেন নিজের ও পরিবারের ওপরও সেই নিয়ামতের প্রভাব দেখান।
ঈমান ও তাওয়াক্কুলের বিষয়ে আবু বকর দাক্কাক (রহ.) বলেছেন—তাওয়াক্কুল হলো জীবনের হিসাব এক দিনের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং আগামীকালের বিষয়ে দুশ্চিন্তা না করা। তাই পরিবারের প্রয়োজন বুঝে তাদের জন্য খরচ করা ওয়াজিব।
মনে রাখতে হবে পরিবারে জন্য ব্যয় ও খরচ করা শুধু দায়িত্ব নয়, বরং ইবাদত। স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের জন্য খরচের ক্ষেত্রে স্বামীদের উচিত উদারতা দেখানো।
এনটি