কেউ মারা গেলে তার পাশে থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব হলো মৃত ব্যক্তির হাত-পা বাঁকা থাকলে সোজা করে দেওয়া। দুই পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ফিতা বা কাপড়ের টুকরা দিয়ে বেঁধে দেওয়া এবং চোখমুখ বন্ধ করে দেওয়া। সম্পূর্ণ শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে মাটি কিংবা ফ্লোরের ওপর না রেখে সরাসরি কোনো খাটিয়ার ওপর তুলে রাখা।

মৃতের লাশ ও অঙ্গভঙ্গি ঠিক করার পর আত্মীয়দের কাজ হলো কাফন-দাফন করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

মৃতের গোসল

পুরুষ ও নারী মাইয়েতের গোসলের নিয়ম প্রায় একই রকম। পুরুষের গোসল নেককার পুরুষ এবং নারীদের গোসল পরহেজগার নারীরা দেবেন। পর্দা ঘেরা স্থানে মাইয়েতকে নিয়ে প্রথমে একটা লম্বা মোটা কাপড় দিয়ে সতর ঢেকে তার ভেতর থেকে শরীরের অন্যান্য কাপড় খুলে দিতে হয়। সতর না দেখে বাঁ হাতে কোনো কাপড় পেঁচিয়ে তা দিয়ে মাইয়েতকে তিন বা পাঁচটি ঢিলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করাতে হয়। পানি দিয়ে ধৌত করাতে হয়। তারপর নাকে, মুখে ও কানে তুলা দিয়ে অজু করাতে হয়।

তবে ফরজ গোসল অবস্থায় মৃত্যু কিংবা হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মৃত্যু হলে মুখে ও নাকে পানি দিয়ে বের করা জরুরি। অজুর সময় প্রথমে চেহারা, তারপর দুই হাত ও মাথা মাসেহ করে উভয় পা ধুয়ে দিতে হয়। অতঃপর সাবান দিয়ে মাথা ধুয়ে মাইয়েতকে বাঁ কাতে শুইয়ে বরই পাতার কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ডান পাশে তিনবার পানি ঢালতে হয়। যেন নিচের দিকে বাঁ পার্শ্ব পর্যন্ত পৌঁছে যায়। 

একইভাবে ডান কাতে শুইয়ে বাঁ পার্শ্বে তিনবার পানি ঢালতে হয়। অতঃপর মাইয়েতকে নিজের শরীরের সঙ্গে ঠেস লাগিয়ে একটু বসিয়ে হালকাভাবে পেটের ওপর থেকে নিচের দিকে মালিশ করতে হয়। 

ময়লা বের হলে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে হয়। অতঃপর গোলাপ জল ও কর্পূর মেশানো পানি ডানে-বাঁ নিচ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হয়। গোসল শেষে শুকনা কাপড় দ্বারা শরীর মুছে কাফন পরাতে হয়। 
 
কাফন পরানোর নিয়ম

নারীদের পুরো শরীর সতর। তাই পুরো শরীর সুন্দরভাবে আবৃত করার জন্য পাঁচটি কাপড় দেওয়া সুন্নত। কাপড়গুলো হলো—ইজার, লেফাফা, কোর্তা বা জামা, সিনাবন্দ ও সারবন্ধ বা ওড়না। 

মাইয়েতকে কাপড় পরানোর সুন্নত নিয়ম হলো প্রথমে লেফাফা, তারপর ইজার, তারপর সিনাবন্দ ও জামা বিছাতে হয়। তারপর মাইয়েতকে কাফনের ওপর চিত করে শোয়াতে হয়। এরপর চুলগুলো দুটি গুচ্ছ করে (দুদিক থেকে) জামার ওপর দিয়ে সিনায় রাখবে।

এরপর (মাথা ঢেকে) ওড়নার উভয় পাশ সিনার চুলের ওপর লেফাফার ভেতরে রাখবে। এরপর ইজার, অতঃপর লেফাফা গুটিয়ে নেবে যেভাবে পুরুষের কাফন গোটানো হয়। অর্থাৎ আগে বাঁ পাশ উঠাবে, তারপর ডান পাশ উঠিয়ে তার ওপরে রাখবে। এরপর কাফনের ওপরে একটি কাপড়ের টুকরা (সিনাবন্দ) পেঁচিয়ে দেবে, যেন কাফন সরে না যায়। এ কাপড় চওড়া হবে সিনা থেকে নাভি পর্যন্ত। আবার সিনা থেকে হাঁটু পর্যন্ত প্রশস্ত হওয়ার কথাও বলা হয়েছে, যাতে লাশ নিয়ে চলার সময় রান দোল খাওয়ার কারণে কাফন খুলে না যায়। 

দাফনের সময় সতর্কতা

নারী মাইয়েতের খাট আলাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া উত্তম। যেন বেগানা পুরুষের দৃষ্টি লাশের ওপর না পড়ে। নারী মাইয়েতকে কবরে রাখার সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কাপড় বা চাদর দিয়ে ঢেকে কবরের প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়। 

নারীর লাশ তার মাহরাম ব্যক্তিরাই কবরে নামাবে। মাহরাম না  থাকলে অন্য আত্মীয়রা,  তারাও   না থাকলে   কোনো পরহেজগার ব্যক্তি লাশ কবরে নামাবে 

নারীর জানাজার নামাজ আর পুরুষের জানাজার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়ায় তেমন পার্থক্য নেই। প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের জানাজার নামাজে একই দোয়া পড়তে হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ও ছেলের জানাজার দোয়াও একই।

এনটি