প্রতীকী ছবি

দোয়া কুনুত মূল্যবান দোয়াগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম, বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাআতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে সুরা মিলানোর পর এটি পাঠ করতে হয়। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ আবেদনগুলো তুলে ধরা হয়। দোয়া কুনুত রাসুল (সা.) মাঝে মাঝে পাঠ করতেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি একরাতে নবী (সা.)-এর নিকটে ছিলাম। তিনি শয্যাত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। এরপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সুরা আআলা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সিজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহা ও কাফিরূন পাঠ করলেন এবং রুকু-সিজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতিহা ও ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে কুনূত পড়লেন।’ (কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০১; নাসবুর রায়াহ : ২/১২৪)

দোয়া কুনুত আরবি :

اَللَّهُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়ানু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাসকুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু ওয়ালাকা নুছল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া; ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক্।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

আরও পড়ুন : বিতর নামাজের কাজা যেভাবে পড়তে হয়

দোয়া কুনুতে আরও যা পড়তে পারবেন

বিতিরের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোনো দোয়াও করতে পারেন। হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কোরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে, এমন কিছু আয়াত পড়েন— সেটাও জায়েজ আছে।

ইমাম নববী বলেন, জেনে রাখুন- অগ্রগণ্য মাজহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তাই যেকোনো দোয়া পড়লে— এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কোরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে। তবে হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম। (ইমাম নববির ‘আল-আজাকার, পৃষ্ঠা : ৫০)

দোয়া কুনুতে যে দোয়া পড়তে পারেন

কোরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে, সেসব আয়াত পড়া ও সেগুলো দিয়ে কুনুত করা জায়েজ হবে। যেমন- ধরুন আল্লাহ তাআলার বাণী:

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ  [آل عمران: 8]

উচ্চারণ : রাব্বানা লা-তুযিগ ক্বুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা, ওয়াহাব লানা মিন লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আন্তাল ওয়াহ্যাব।

অর্থ : হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।) [সুরা আলে ইমরান, আয়াত : -৮]