চট্টগ্রামকে হারিয়ে শিরোপা মাহমুদউল্লাহর খুলনার
ছবি: সংগৃহীত
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জেমকন খুলনা: ২০ ওভারে ১৫৫/৭ (জাকির ২৫, মাহমুদউল্লাহ ৭০*; নাহিদুল ১৯/২, শরিফুল ৩৩/২, মোসাদ্দেক ২০/১, মুস্তাফিজ ২৪-১)।
গাজী গ্রুপ চট্টগাম: ২০ ওভারে ১৫০/৬ (লিটন ২৩, সৈকত ৫৩, শামসুর ২৩, মোসাদ্দেক ১৯; শুভাগত ৮/১, আল আমিন ১৯/১, শহিদুল ৩৩/২)।
ফল: জেমকন খুলনা ৫ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মাহমুদউল্লাহ।
টুর্নামেন্টসেরা: মুস্তাফিজুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
কত কাছে তবু কত দূরে! পুরো টুর্নামেন্টে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম খেলেছে রাজার হালে, দিগ্বিজয়ীর ঢংয়ে। নক আউটে সেই চট্টগ্রামই কিনা চাপে নুয়ে পড়লো! প্রথম কোয়ালিফায়ারের পর ফাইনালেও জেমকন খুলনার কাছে হার, তাতে শিরোপাটা রয়ে গেলো অধরাই। ওদিকে ফাইনালে পাঁচ রানে চট্টগ্রামকে হারিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথম শিরোপার স্বাদ পেলেন খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ফাইনালের আগে শিশির-নিয়ামক ভাবনার একটা বড় অংশজুড়ে ছিল দুই অধিনায়কের। রাতের শিশিরভেজা মাঠে বলের গ্রিপ থাকবে না তেমন, সে ভাবনা থেকে চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন বোলিং বেছে নিলেন।
বিজ্ঞাপন
শুরুতে খুলনার ‘উপহার’ দেয়া দুই উইকেটে মিঠুনের সিদ্ধান্তটাকে সঠিক বলেই মনে হচ্ছিলো। নাহিদুল ইসলামের বলে মিড অফ আর লং অফে দুটো সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দুই ওপেনার জহুরুল ইসলাম ও ইমরুল কায়েস। সাকিব না থাকায় ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি হওয়া আরিফুল হক আর জাকির হাসান ইনিংস মেরামতে লেগে পড়েন এরপর। তবে জাকির ও আরিফুল যথাক্রমে ২৫ ও ২৩ রান করে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। তাতে শিরোপাপ্রত্যাশী খুলনা আরও বিপদ বাড়ে।
মাহমুদউল্লাহ কিছুটা মন্থর শুরুর পরও আশা জাগাচ্ছিলেন খুলনার। সঙ্গ পেয়েছিলেন শুভাগত হোমের। ১৫ রান নিয়ে অবশ্য তিনি বিদায় নেন একটু পরই। এরপর মাহমুদউল্লাহর উইকেট বাঁচাতে গিয়ে রান আউটে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে ফেরেন শামিম হোসেনও। তাতে অধিনায়কের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে খুলনা।
দলের দারুণ প্রয়োজনের সময়ে হতাশ করেননি রিয়াদ, অধিনায়ক থেকে নায়কও বনে যান রীতিমতো। আট চার আর দুই ছয়ে ৪৮ বলে করেন ক্যারিয়ার-সেরা ৭০। ছাড়িয়ে যান ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করা অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসটিকে। তাতে খুলনাও পায় ১৫৫ রানের লড়াকু পুঁজি।
জবাব দিতে নেমে চট্টগ্রাম অবশ্য শুরুটা করেছিলো দারুণ। আগের ম্যাচের হন্তারক মাশরাফির ফাঁদে পা দেননি সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের কেউই। তিন ওভার শেষে দুজনে স্কোরবোর্ডে রান যোগ করেন ২৩ টি। সৌম্য খেই হারালেন এর পরই, ফিরলেন শুভাগতর শিকার হয়ে।
এরপর শহিদুল ইসলাম দারুণ এক ফিল্ডিংয়ে ফেরান টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে। চট্টগ্রাম ওপেনারের ড্রাইভ দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে সরাসরি থ্রোতে রান আউট করেন শহিদুল। ২৩ বলে ২৩ রান সংগ্রহ করে ফেরেন লিটন। সৈকত আলির অর্ধশতকের কল্যাণে এরপর ম্যাচে টিকে থাকে চট্টগ্রাম।
রান বলের হিসাব ততক্ষণে প্রায় আকাশ ছুঁয়ে গেছে। ১৯তম ওভারের শেষ বলে হাসান মাহমুদকে মারা মোসাদ্দেকের ছক্কা শেষ ওভারের চাপ কিছুটা কমায় চট্টগ্রামের। তবে চাপটা খুব বেশি কমেনি তাতে, শেষ ওভারে চট্টগ্রামের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৬ রান।
এর পরের গল্পটা কেবলই শহীদুলের। দিন পাঁচেক আগে হোটেল ছেড়ে গিয়েছিলেন বাবার মৃত্যুর খবর শুনে। সেই তিনিই ফাইনালের জন্যে পিতৃবিয়োগের শোক একপাশে রেখে নেমে পড়েন মাঠে, পেয়ে যান ফাইনালের নায়ক হওয়ার সুযোগও। প্রথম দুই বলে তিন রান দেয়ার পর মোসাদ্দেক আর সৈকতকে ফেরান তিনি। এরপর নাদিফ চৌধুরীকে পঞ্চম বলে একটি মাত্র রান নিতে দিয়ে নিশ্চিত করেন খুলনার শিরোপাজয়, শেষ বলে ছক্কা হজমেও তাই মাহমুদউল্লাহদের উৎসবের রঙ ফিকে হয়নি আদৌ।
বিপিএলে অধিনায়কত্ব করেও মাহমুদউল্লাহর শিরোপার স্বাদ মেলেনি কখনো, একই ভাগ্য ছিলো খুলনারও। সেটা ঘুচলো বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে। সে খুলনার উৎসব আর ফিকে হয় কি করে!
এনইউ