দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরের মাঠে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেও দাপট দেখাচ্ছিল বাংলাদেশ। ডারবান টেস্টের প্রথম দিন স্বাগতিকদের বিপক্ষে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিন ঘুরে দাঁড়ায় অধিনায়ক মুমিনুল হকের দল। ৪ উইকেটে ২৩৩ রানে প্রথম দিন শেষ করা ডিন এলগারদের আজ ৩৬৭ রানে আটকে দেয়। এরপর ব্যাট হাতেও দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ বিকেলে সাইমন হারমার-ঝড়ে লণ্ডভণ্ড সফরকারীরা।

দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের থেকে এখনো ২৬৯ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা স্কোর বোর্ডে তুলেছে ৯৮ রান। যেখানে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ৪৪ এবং নাইট ওয়াচম্যান তাসকিন আহমেদ ০ রানে অপরাজিত থেকে আগামীকাল শনিবার ম্যাচের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।

দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশ দলের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় স্বাগতিকদের স্পিন। দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় সেশনের শেষ ভাগে বাড়তি টান আর বাউন্স পেয়েছেন স্পিনাররা। প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর টেস্টে ফেরা হারমার সাদমান ইসলামের পর ফিরিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত মুমিনুল ও মুশফিকুর রহিমকে। হারমার আর কেশভ মহারাজের স্পিন জুটি অস্বস্তিতে ফেলার সঙ্গে ভয়েরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এর আগে আজ দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে দারুণ বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিতে পারলেও দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে প্রতিরোধ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার লেজের ব্যাটসম্যানরা। টাইগার বোলারদের অস্বস্তিতে ফেলে শেষ দুই উইকেটে তারা জমা করে ৬৯ রান। এতে প্রথম ইনিংসে সাড়ে তিনশ’ পেরোনো সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা। এই ৩৬৭ রানই দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন রান।

বাংলাদেশি পেসার খালেদ আহমেদ এমনিতে ছায়ায় পড়ে থাকেন তাসকিন, এবাদত, শরিফুল, রাহিদের। দেশের মাটিতে ৩ পেসার খেলানোর ভাবনা বিলাসিতার মতো। দেশের বাইরে ৩ পেসার খেলালেও সাইড বেঞ্চেই জায়গা হয় খালেদের। এবার শরিফুলের ইনজুরির ভাগ্যের দুয়ার খুলেছে তার। সুযোগ পেয়েই বাজিমাত ডানহাতি পেসারের। নিখুঁত লাইং-লেন্থ আর গতিতে নাকাল করেছেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট। খালেদের ৪ উইকেটের সঙ্গে মিরাজ ৩টি এবং এবাদত নিয়েছেন ২ উইকেট।

এরপর ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হয়। নতুন বলের চ্যালেঞ্জ উতরে যান দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় আর সাদমান ইসলাম। টেস্ট মেজাজে দেখেশুনে খেলে শুরুর ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয় তোলে ২৫ রান। বিপত্তি বাধে চা বিরতির আগে। ৯ রান করে আউট হন সাদমান।

সাইমন হার্মারের ফ্লাইটেড বলের লেন্থ পড়তে গড়বড় করে বসেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। সামনে না খেলে তিনি অপেক্ষায় থাকেন পেছনের পায়ে। বল পিচ করে টার্ন না করে একটু নিচু হয়ে সোজা গিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। এই আউটের পরে দ্বিতীয় সেশন শেষ হয়।

দিনের তৃতীয় ও শেষ সেশনে ফিরে বেশ সাবলীল ব্যাট করতে থাকেন জয় ও নতুন ব্যাটসম্যান শান্ত। দেখেশুনে খেলে দুই জনেই ছুঁটছিলেন অর্ধশতকের দিকে। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে বিদায় নেন শান্ত। হারমারের ফ্লাইটেড ডেলিভারি মিডল স্টাম্পে পিচ করে সামনে টেনে আনে শান্তকে। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেন এই বাঁহাতি। কিন্তু বল দারুণভাবে টার্ন করে শান্তর রক্ষণ ভেঙে আঘাত হানে স্টাম্পে। শেষ ২টি করে চার-ছক্কায় ৮৭ বলে ৩৮ রান করেন শান্ত।

সেই ঝড়ে হারমারের করা পরের ওভারেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক মুমিনুল। কুইকার ডেলিভারিটি সামনে পা বাড়িয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলার চেষ্টা করেন মুমিনুল। কিন্তু বলের লাইন কাভার করতে পারেননি পুরোপুরি। ব্যাটের কানায় লেগে প্যাডে ছুঁয়ে বল যায় সামনের দিকে। সিলি মিড অফ থেকে বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্তভাবে এক হাতে ক্যাচ নেন পিটারসেন। মুমিনুল ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই।

সাদমান, শান্ত, মুমিনুলের পর হারমারকে উইকেট দিতে বাধ্য হন মুশফিক। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হতে তখন মাত্র ৩ ওভার বাকি। হারমারের লেগ স্টাম্পে পিচ করে হালকা বেরিয়ে যাওয়া বলে গ্ল্যান্স করার চেষ্টা করেন মুশফিক। তবে বলের লাইনে যেতে পারেননি। গ্লাভসে লেগে বল যায় উইকেটের পেছনে। জোরাল আবেদনে আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় প্রোটিয়ারা। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল হালকা ছুঁয়ে গেছে মুশফিকের গ্লাভসে। ১৯ বলে ৭ রান করেন মুশফিক।

পরে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে তাসকিনকে পাঠায় বাংলাদেশ দল। একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলা জয় তাসকিনকে নিয়ে বাকি ৩ ওভার পাড়ি দেন। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের থেকে এখনো ২৬৯ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা সংগ্রহ ৯৮ রান। ওপেনার জয় ৪৪ এবং তাসকিন ০ রানে অপরাজিত থেকে আগামীকাল তৃতীয় দিন শুরু করবেন।

টিআইএস/এনইউ