জাতীয় দলের জার্সিতে সবশেষ ২০২১ সালের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। এরপর আর টাইগারদের হয়ে খেলার সুযোগ মেলেনি এই ব্যাটারের। তবে দেশের ঘরোয়া লিগগুলোর নিয়মিত মুখ মিঠুন চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএলে) খেলেছেন ঢাকা ডমিনেটরসের হয়ে। 

মিথুনের দল ঢাকা এবারের আসরে বলার মতো তেমন কিছুই করতে পারেনি। টুর্নামেন্টে মোট ১২ ম্যাচ খেলে নাসির-মিথুনরা জয়ের দেখা পেয়েছেন মোটে ৩ ম্যাচে। তবে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে ১১ ম্যাচে মিঠুন করেছেন ২৩৩ রান। রানের হিসাবে খুব আহামরি কিছু না হলেও ঢাকার হয়ে এই রানটা তেমন খারাপও নয়। কারণ এই রান নিয়েই ঢাকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ৩৬৬ রান করে সবার উপরে আছেন নাসির হোসেন। 

বিপিএলের এবারের আসরের পর্দা না নামলেও ঢাকার বিপিএল যাত্রা শেষ হয়েছে ইতোমধ্যেই। এ কারণেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন মিঠুন। মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় বিপিএল, নিজের পারফরম্যান্স, নাসির এবং তৌহিদ হৃদয়ের ফর্ম নিয়ে কথা বলেছেন ডানহাতি এ ব্যাটার। এছাড়া ঢাকা দলের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত জটিলতা  নিয়েও কথা বলেছেন মিডল অর্ডারের এই ব্যাটার। 

প্রশ্ন: আসর শুরুর আগে অনেক বিতর্ক ছিল, তবুও কেমন উপভোগ করলেন বিপিএল?

মিঠুন: আসলে মাঠে যখন নামি তখন তো কী আছে বা নেই সেগুলো মাথায় থাকে না। মাঠে নামলে তখন পুরো চিন্তাটাই খেলার মধ্যে থাকে। যতটুকু পেরেছি উপভোগ করার চেষ্টা করেছি আর কি।

প্রশ্ন: দল হিসেবে ঢাকা পারফর্ম করতে পারেনি। কোনো হতাশা আছে কি?

মিঠুন: হতাশা তো থাকেই। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়েরই তো আশা-ভরসা থাকে, যে দলের হয়েই সে খেলুক সেই দল যেন ভালো ফলাফল করে। একটা ভালো অবস্থানে যাক। ফাইনাল বা চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো হাতে নেই। অন্তত ভালো ক্রিকেট খেলা বা কোয়ালিফাই করার লক্ষ্য থাকে। এই ধরণের টুর্নামেন্টে সবার লক্ষ্য থাকে কোয়ালিফাই করা। সেটা হয়নি যেহেতু একটু তো খারাপ লাগা তো আছেই।

প্রশ্ন: নিজের পারফরম্যান্স কিভাবে দেখছেন, আরও ভালো করার সুযোগ ছিল কি?

মিঠুন: আমার ক্ষেত্রে এই পারফরম্যান্সটা মোটামুটি। আরও ভালো করার সুযোগ ছিল, যেমন কিছু ম্যাচে ৩৫ বা ৪০ কিংবা ৪৮ যেটাই করেছি এগুলো যদি বড় করতে পারতাম। কিছু ম্যাচে আবার শুরুতে আউট হয়েছি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অবশ্য এগুলো হতেই পারে। তবে সুযোগ ছিল আরও ভালো করার। 

প্রশ্ন: দল হিসেবে ভালো করলে নিজের ভালো করার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যেত কিনা?

মিঠুন: এটা তো অবশ্যই। কারণ আবহাওয়াটা অনেক ম্যাটার করে। আপনি কোন পরিবেশে আছেন, কী হচ্ছে আশেপাশে এগুলো  অনেক বড় ব্যাপার। আমি মনে করি দলের খেলোয়াড় যদি আরও ভালো থাকতো পারফরম্যান্স আরও ভালো হতো। যখন আমি রংপুরে ছিলাম, ৪ মৌসুম খেলেছি। রংপুরের ওই মৌসুমগুলোয় আমার পারফরম্যান্স অন্যরকম ছিল। এখন পর্যন্ত হিসাব করলে রংপুরের হয়ে খেলা ৪ মৌসুমই আমার সেরা সময় ছিল বিপিএলের। তারপরেও প্রত্যেকটা বিপিএলে আলহামদুলিল্লাহ পারফর্ম করার চেষ্টা করেছি। ব্যাটিংয়ে আমাদের শুরুটা ভালো হয়নি তেমন। শেষ দুই ম্যাচে আমি ওপেনিং করেছি। এমন যদি শুরু থেকেই করতাম তাহলে মোট রানটা আরও বেশি হত আমার, পারফরম্যান্স আরও ভাল হতো। দলের প্রয়োজনেই সবসময় খেলার চেষ্টা করে থাকি, যেখানেই খেলি।     

প্রশ্ন: ঢাকা দলে বিদেশিদের পারফরম্যান্স নিন্মমুখী ছিল। দলের ব্যর্থতার বড় কারণ কি এটাই?

মিঠুন: দল হিসেবে বড় কারণ বলব না। কিন্তু আমাদের দেশি যে খেলোয়াড়রা ছিল বিশেষ করে বোলিং আক্রমণটা খুব ভালো ছিল। বোলাররা ভাল করেছে। তাসকিনের কথা বলতে হয়, আল-আমিনও আর এদিকে নাসির রয়েছে। আমরা যদি ব্যাটিংটা একটু ভালো করতাম বিদেশি বা দেশি ব্যাটাররা মিলে সাপোর্টটা দিতে পারতাম তাহলে রেজাল্ট আরও ভালো হতে পারতো।   

প্রশ্ন: সৌম্যের আরও ভালো করার সুযোগ ছিল কিনা? 

মিঠুন: ওপেনার ব্যাটার কিন্তু ম্যাচের ২০ ওভারই সুযোগ পায়। সৌম্য ছিল আমাদের দলের প্রধান ব্যাটার। ওর কাছে থেকে আমাদের দলের সবার আশা আরও বেশি ছিল। আমাদের বেশিরভাগ ম্যাচেই কিন্তু প্রথম ৬ ওভারে টপ অর্ডার ব্যাটাররা আউট হয়ে গিয়েছে। ১২ ম্যাচের মধ্যে ৭ ম্যাচেই এমনটা হয়েছে যে পাওয়ারপ্লেতে ৩টা উইকেট চলে গিয়েছে। তারপরে নাসির আর আমি চেষ্টা করেছি দলকে রানে ফেরাতে, দলেকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে। আবার আমাদের পেছনে আন্দ্রে রাসেলের মত কোনো বিগ হিটার ছিল না। এছাড়া ব্যাটারের সংখ্যাও অনেক ছিল। সব মিলিয়ে আসলে একটা দলের ভালো ফল না করার পেছনে অনেক কারণ তো থাকেই।

প্রশ্ন: আপনাদের পারিশ্রমিক ইস্যু নিয়ে সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। এটার কি সমাধান হয়েছে? 

মিঠুন: সমাধান বলতে তারা চেষ্টা করছে চলতি মাসের ১২ তারিখের মধ্যে সব ক্লিয়ার করে দিতে। নাসির হয়তো ৭৫% পেয়েছে। আমি ৫০% এর বেশি পেয়েছি। অন্যদেরটা বলতে পারব না।  

প্রশ্ন: কোচ চামিন্দা ভাস থেকে কিছু শিখেছেন কি না? 

মিঠুন:  নতুন কিছু বলতে সবকিছুই তো ক্রিকেটীয় ভাষা। তার অনেক অভিজ্ঞতা, ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। বোলার ছিল মানেই যে বোলিং নিয়েই কাজ করবে সেটা না। আমরা ব্যাটিং নিয়েও কথা বলেছি। তবে খুব একটা কিছু শিখি নি। ছোট ছোট কিছু বিষয় আর ওভারঅল ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়েছে। কিছু কার্যকারী কথাও তার থেকে শুনেছি।

 

প্রশ্ন: তৌহিদ হৃদয় এবং নাসিরের পারফরম্যান্স কেমন দেখলেন?

মিঠুন: তৌহিদ হৃদয় খুবই ভালো ফর্মে রয়েছে। ও বিপিএলে যেভাবে ডমিনেট করে ব্যাট করছে সেটা দারুণ ব্যাপার। এছাড়া নাসিরও যেভাবে সব বিভাগে ডমিনেট করে খেলছে ভালো বলতেই হয়। নাসির ঢাকা দলের সেরা পারফর্মার, পাশাপাশি টুর্নামেন্টেরও। বেশ ভালো করেছে। যদিও অনেকটা লম্বা সময় পরে এভাবে ফিরে এসেছে সে। ওর একটা বড় ইনজুরি ছিল যে কারণে আগে অনেক কিছুই তার অনুকূলে ছিল না, সাপোর্ট করে নি সবকিছু। খেলোয়াড় হিসেবে নাসিরের যোগ্যতা কেমন সেটা সবার জানা। সে একসময় বাংলাদেশ দলের ফিনিশার ছিল। ওর অভিজ্ঞতা আছে। নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই। ও অবশ্যই ভালো টাচে আছে। আমার মনে হয় এ ধরনের খেলোয়াড়কে যদি দলের প্রয়োজনে সুযোগ দেওয়া হয় ডেলিভার করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ এসব সে পার করেছে।  

প্রশ্ন: বিপিএল তো শেষ। এখন পরবর্তী পরিকল্পনা কী?  

মিঠুন: আপাতত একটু পরিবারের সাথে সময় কাটাব। শুক্রবার ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ব। বিপিএলের শেষ ম্যাচ খেলতে পারিনি পায়ের ইনজুরির কারণে। ভারতে গিয়ে সুযোগ হলে ডাক্তারকেও একবার দেখিয়ে আসব। এরপর কিছুদিন পর আবারও ক্রিকেটে ফিরব। 

 
এসএইচ/এনইআর