কোমর সোজা করে না দাঁড়াতেই আবার অন্ধকার নেমে এসেছে ক্রিকেটারদের জীবনে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এদেশের ক্রিকেট, তাতে জাতীয় দল বা তার আশপাশে থাকা ক্রিকেটাররা ক্ষতি কাটিয়ে উঠলেও এর বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়তে হয়েছে। আবার ক্রিকেট ফেরায় স্বস্তি মিলেছিল, তবে সে স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। নিমিষেই উবে গেল সব।

করোনার কারণে গত মার্চ মাসে শুরু হওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২২তম আসর স্থগিত করেছে বিসিবি। এবার তো দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে সোজা লকডাউনের পথে হেঁটেছে বাংলাদেশ সরকার। সবমিলিয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিল) চলমান আসর আবার কবে আলোর মুখ দেখবে সে নিশ্চয়তা নেই।

করোনার এমন পরিস্থিতির কারণে আজ (শনিবার) মিরপুরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয় শঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে হুমকির মুখে খেলোয়াড়দের জীবনযাপন। এভাবে চলতে থাকলে কি হবে ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ?

বিজয় বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের জীবনযাত্রা থমকে গেছে। আমরা যারা জাতীয় দলে খেলি বা রাডারে আছি তারা ভাবি যে এক বছর চালানো যায়। আপনি যদি নিচের দিকের ক্রিকেটারদের কথা চিন্তা করেন; তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ, প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম শ্রেণি এমনকি ক্রিকেট একাডেমির প্লেয়ার; তাদের কিন্তু সবকিছু থমকে গিয়েছিল।’

সঙ্গে যোগ করেন বিজয়, ‘ক্রিকেট ফেরায় আমরা খুশি হলাম। আবার থামার কারণে কিন্তু আমাদের জীবন হুমকির মুখে। কী হবে, ভবিষ্যৎ কি? আবারও ৬ মাস বসে থাকতে হবে কি না। সত্যিই খারাপ লাগার বিষয়। এর মধ্যেই মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যতটুকু নিরাপদে থাকা যায়।’

করোনাভাইরাসের শঙ্কা মাথায় নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ মাঠে গড়ায়। তবে এক রাউন্ড পরই বন্ধ হয়ে যায় সেটি। এরপর ১৯ মার্চ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গণমাধ্যমকে জানান, শুধু ডিপিএলই নয়, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল প্রকার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট বন্ধ থাকবে। 

সে সিদ্ধান্তের প্রায় ৭ মাস পর গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয় বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ। এরপর মাঠে গড়ায় বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ নামে আরও একটি টুর্নামেন্ট। তবে সেখানে খেলার সুযোগ মেলেনি জাতীয় দলের ভাবনার বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের, যারা শুধুমাত্র ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন। প্রায় এক বছর গত মার্চ মাসে এনসিএল দিয়ে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ফেরায় বিসিবি। সেটিও স্থগিত হয়ে গেছে। 

শঙ্কা আছে আগামী মে মাসে শুরু হতে যাওয়া ডিপিএল নিয়েও। ঘরোয়া লিগের এ টুর্নামেন্ট খেলেই সারা বছরের রুটি-রুজির যোগান দেন অনেক ক্রিকেটার। এবারও যদি ডিপিএল না হয়, তবে ঘোরতর বিপদে হবে তাদের।

বিজয় বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবী থমকে যাওয়ার মতো অবস্থা। এরকম অবস্থা যে খেলাটা আবার ফেরত আসলো, আমরা সবাই খুশী হলাম। ওই ভাবে চলতে ছিল। আবার করোনার কারণে আবার কিন্তু হুমকির মুখে সবাই। যে কি হবে, ভবিষ্যতটা কেমন হবে। লকডাউন করতে করতে তিন-চার মাস, ছয় মাস কিন্তু শেষ হয়ে গেছে। আদৌ এর অবস্থান কী রকম দাঁড়াবে, ফিনিশিং টাচ টা কোথায়- এগুলো নিয়ে আমরা সবাই সন্দিহান। তাই অবশ্যই খারাপ লাগার বিষয়।’

টিআইএস/এমএইচ/এটি