বছর ঘুরছে, ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাচ্ছে, তবুও পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না। যত দিন গড়াচ্ছে, ততই যেন করোনাভাইরাস তার ভয়ঙ্কর রূপ সামনে আনছে। প্রতিদিনই ছাড়াচ্ছে পূর্বের রেকর্ড, সংক্রমণে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেটকেও টালমাটাল করেছে করোনাভাইরাস। গতবারের তুলনায় এবার আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয় ২০২০ সালের ৮ই মার্চ। সেদিন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী ও দুইজন পুরুষ।

ক্রিকেটে করোনার ছোঁয়া প্রথম আতঙ্কিত করে পাকিস্তান সুপার লিগকে। গতবছর পিএসএল চলাকালীনর কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে দেশে ফিরে যান ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার অ্যালেক্স হেলস। এরপর বন্ধ হয়ে যায় গোটা টুর্নামেন্টই। তবে প্রথমবার ক্রিকেটে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে স্কটল্যান্ডের ক্রিকেটার মাজিদ হকের। তিনি দেশটির হয়ে সর্বশেষ মাঠে নেমেছেন ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত খবর পাওয়া যায় বাংলাদেশের গেম ডেভেলপমেন্ট কোচ ও প্রথম শ্রেণির প্রাক্তন ক্রিকেটার আশিকুর রহমান পজিটিভ হলে। যদিও এর আগে করোনা আক্রান্ত হন ক্রিকেটার ইলিয়াস সানি। তবে তার পজিটিভ আসার খবর পরে প্রকাশ পায়। এরপর একে একে সাবেক ক্রিকেটার সজীব দাস, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল হয়ে অনেকেই সংক্রমিত হন।

করোনার প্রথম ধাপে পরিবারসহ আক্রান্ত হন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, ক্রিকেটার নাজমুল ইসলাম অপু, সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল, টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক, টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সহ অনেকেই।

ক্রিকেট অঙ্গনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু হয় ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট দল ল্যাঙ্কাশায়ারের চেয়ারম্যান ডেভিড হগকিসের। ২০২০ সালের মার্চ মাসে মারা যান তিনি।

গতবছরের শেষ নাগাদ করোনাভাইরাস কিছুটা খোলস বন্দি হলেও চলতি বছরের মার্চ থেকে নতুন রূপে আবির্ভাব হয়েছে। এবার আগের থেকে বেশি আক্রান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে জাতীয় ক্রিকেট লিগ। সাদমান ইসলাম, মোহাম্মদ আশরাফুল, বিশ্বকাপজয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী, নাঈম ইসলাম সহ এনসিএলের একাধিক ক্রিকেটার আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্তের তালিকায় নাম উঠেছে পেসার এবাদত হোসেন, অলক কাপালি সহ আরও বেশ কয়েকজনের। ম্যাচ অফিশিয়াল থেকে কোচিং স্টাফ, বোর্ড কর্তা থেকে শুরু করে গ্রাউন্ডসম্যান ছাড় পায়নি কোনো বিভাগই। এমনকি বাংলাদেশে খেলতে এসে মাঠে নামার আগে করোনা ধরা পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার হেইডেন ওয়ালশের শরীরের। সফরকারী আয়ারল্যান্ড উলভ দলের এক ক্রিকেটারও কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবশেষ করোনা আক্রান্ত হন বিসিবি প্রধান পিস কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। নিজ দেশ শ্রীলঙ্কায় ফেরার টিকিট কাটলেও ঢাকায় বন্দী হয়ে গেলেন তিনি! তবে এর মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। অনেকেই নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

লিজেন্ডস টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে আক্রান্ত হন সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ। পরে সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরেছিলেন তিনি। তবে সেই টুর্নামেন্ট শেষ করার পর করোনাভাইরাস ধরা পড়ে শচীন টেন্ডুলকারের শরীরে। এরপর একে একে সে টুর্নামেন্টে খেকা ইরফান পাঠান, ইউসুফ পাঠানদের করোনা পজিভিভ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

টিআইএস/এটি/এনইউ