ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন উত্তাপ শেষ কবে ছড়িয়েছে, সেটি জানতে হলে ইতিহাসের পাতা ঘাটতে হবে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব আর আবাহনী লিমিটেডের মধ্যকার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ২০১৯-২০ মৌসুমের লড়াই ফিরিয়ে আনল পুরনো দিন। সাদাকালো শিবিরের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আলোচনার জন্ম দিলেন, সেটি মেন্টাল গেম কীনা সাকিবই হয়তো ভালো বলতে পারবেন।

তব সব ছাপিয়ে এল মোহামেডানের কাঙ্ক্ষিত জয়। মিরপুরে বৃষ্টি আইনে আবাহনীকে ৩১ রানে হারাল মোহামেডান।

ক্রীড়াঙ্গনে ঢাকা লিগ মানেই আবাহনী মোহামেডান দ্বৈরথ। এ দুই দলের খেলা হলে এক বিন্দুর ক্রিকেটপ্রেমিরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। দুই দলের লড়াই মানেই টান-টান উত্তেজনা। মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি মাঠের বাইরের লড়াইটা জমজমাট। তবে সম্প্রতি মোহামেডান নিজেদের জৌলুশ হারিয়েছে। তাদের হুঙ্কার ঠিক যেন নখ জারানো বাঘটির মতো। কিংবা ঠোট কাটা কাঠঠুকরা!

ঐতিহ্যবাহী দুই দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আবাহনী লিমিটেডের মধ্যকার দ্বৈরথ এখন শুধুই কাগজ-কলমে। নিজেদের সুদিন বেশ আগেই পিছে ফেলে এসেছে মোহামেডান। কী ফুটবল, কী ক্রিকেট! সবখানেই মলিন সাদাকালোরা। তবে দুই দলের মধ্যকার লড়াইটা যখন মর্যাদার থেকে বেশি কিছু, তখন পরিসংখ্যান আর শক্তিমত্তা পাল্লায় তোলা দুষ্কর।

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের সপ্তম আসরে এসে একে অন্যের মুখোমুখি হয় দুই দল। শুক্রবার ছুটির দিনে ম্যাচটি মাঠে গড়ায় দুপুর দেড়টায়। তবে সমর্থকরা উৎসবে মাতার খুব বেশি সুযোগ পাননি। করোনাভাইরাসের কারণে গ্যালারিতে দর্শক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। শুক্রবার সাধারণত ছুটি থাকে বিসিবিতে, তবে এদিন প্রেসিডেন্ট বক্সও ছিল পূর্ণ। মাঠে বসে খেলা দেখেন বোর্ডের অনেক কর্মকর্তা।

এমন দিনেই কি না অঘটনটা ঘটালেন মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আগে ব্যাট করে আবাহনীকে ১৪৬ রানের লক্ষ্য দেয় মোহামেডান। সেই লক্ষ্য টপকাতে নেমে বিপাকে পড়ে আবাহনী। শুরুতেই হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। প্রথম ঘটনা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে। প্রথমারের মতো বল করতে আসেন সাকিব নিজে।

ওভারের শেষ বলে মুশফিকের বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করেন মোহামেডান অধিনায়ক। সেটি নাকচ করে দেন আম্পায়ার ইমরান পারভেজ। এতেই ক্ষিপ্ত হন সাকিব। লাথি দিয়ে ভাঙেন স্টাম্প। এতে উত্তেজনা ছড়াল ম্যাচে। ভিডিও ফুটেজে অবশ্য স্পষ্ট। আউট ছিলেন মুশফিক।

ঘটনা সেখানেই থামেনি। আরও বড় ঘটনাটি ঘটে ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারে। পঞ্চম বলের পর বৃষ্টি নামলে আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত নেন খেলা বন্ধ করার। তবে তাদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন সাকিব। এক পর্যায়ে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করতে করতে স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন তিনি। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় তর্কে জড়ান আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে। পরে অবশ্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে সাকিব।

২০০৭-০৮ মৌসুম থেকে ২০১৮-১৯ মৌসুম পর্যন্ত ২০টি ম্যাচ খেলেছে দুই দল। লড়াই হয়েছে একপেশে। মোহামেডানের ৫ জয়ের বিপরীতে আবাহনীর জয় ১৫টিতে। এবারের লিগেও আবাহনীর পারফরম্যান্স ছিল ঈর্ষণীয়। ৬ ম্যাচে ৫টিতে জিতেছে তারা। তবে ঐতিহ্যের লড়াইয়ে হেরে বসলো আবাহনী। বৃষ্টি আইনে চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ৩১ রানে জয় সাদাকালোদের।

দুদলের ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করা মোহামেডান আবাহনীর বিপক্ষে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে সংগ্রহ করে ১৪৫ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে আবাহনী। তারা দলীয় ২৫ রানের মধ্যেই টপ অর্ডারের ৩ উইকেট হারায়। 

ষষ্ঠ ওভারে বৃষ্টির কারণে ম্যাচ বন্ধ করেন আম্পায়াররা। তার আগে সেই ওভারে প্রথম দুই বলে চার মারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় বল ডট হলেও পরের দুই বলে হয়েছে একটি করে রান। ষষ্ঠ ওভার শেষ হওয়ার এক বল বাকি থাকতেই বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ করে দেয় আম্পায়াররা। তখন ৩ উইকেট হারানো আবাহনীর সংগ্রহ ৩১ রান।

বৃষ্টির কারণে ম্যাচ নেমে আসে ৯ ওভারে। যেখানে জয়ের জন্য আবাহনীকে টার্গেট দেওয়া হয়েছিল ৭৬ রান। বৃষ্টির পর ৩ উইকেটে ৩১ রান নিয়ে খেলতে নেমে পরের ১৯ বলের মধ্যে আরও ৩ উইকেট হারায় আবাহনী। তারা যোগ করতে পেরেছে কেবল ১৩ রান। বৃষ্টির পর তাসকিন আহমেদ একাই নেন ২ উইকেট। এ ছাড়া এক উইকেট নেন আবু জায়েদ রাহী। এর আগে আবাহনীর প্রথম তিন উইকেটই তুলে নিয়েছিলেন শুভাগত হোম। 

এর আগে ম্যাচের শুরুতে মোহামেডানের দুই ওপেনার আব্দুল মজিদ ও পারভেজ হোসেন ইমন মিলে ওপেনিং জুটিতে যোগ করেন ৩৭ রান। দ্রুত রান তুলতে থাকা ইমন ২৬ বলে ২৬ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অন্য ওপেনার মজিদ। এই ওপেনার আউট হয়েছেন ১৮ বলে ১৬ রান করে। মোহামেডানের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইরফান শুক্কুর আগের দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ফিরে গেছেন মাত্র ১৪ রান করে।

পরে শামসুর রহমানকে নিয়ে মোহামেডানের বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে শামসুর ১ রান করে ফিরে গেলে সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সাকিব। ব্যাট হাতে মারমুখী হন তিনি। ব্যক্তিগত ৩৫ রানে তাকে লং অফে জীবন দেন আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন সাকিব তবে সেই বল লুফে নিতে পারেননি মোসাদ্দেক। পরের বলেই ব্যক্তিগত ৩৭ রানে সাইফউদ্দিনের বলেই থার্ড ম্যান অঞ্চলে আরাফাত সানির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সাকিবের ২৭ বলের এই ইনিংসটি সাজানো ছিল ১টি চার ও ২টি ছক্কায়।

শুভাগত হোম বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনি আউট হয়ে যান ৩ বলে মাত্র ১ রান করে। মাহমুদুল হাসান ৩০ ও আবু হায়দার রনি ১২ রান করে অপরাজিত থেকে মোহামেডানকে ১৪৫ রানের পুঁজি এনে দেন।

টিআইএস/এমএইচ