ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় টেস্ট
গুয়াহাটির ‘রাস্তায়’ ভারতের ব্রেকফেইল!
ভারতীয় তারকা স্পিনার কুলদীপ যাদব গুয়াহাটি টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘এই উইকেট রাস্তার মতো’। গুয়াহাটির সেই পেটানো রাস্তাতেও ঠিকঠাক গাড়ি চালাতে পারলেন না ভারতীয় ব্যাটাররা। মুখ থুবড়ে পড়লেন একের পর এক ব্যাটার। অথচ এই পিচেই দু’দিন ব্যাট করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেনুরান মুথুস্বামী শতরান করেছেন। ৯৩ রানের ইনিংস খেলেছেন মার্কো জানসেন। প্রোটিয়া দলের নিচের সারির ব্যাটাররাও রান পেয়েছেন।
যে পিচে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় ১২ ঘণ্টা ব্যাট করেছে, সেখানে দু’ঘণ্টাও ব্যাট করতেও হিমশিম খেল ভারত। যেভাবে ভারতের টপঅর্ডারে ধস নামল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ধুয়ে দিচ্ছেন ভারতীয় সমর্থকরা। কোথায় টেস্ট খেলার মানসিকতা? কোথায় ধৈর্য? কোথায় খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করা? সর্বোপরি, কোথায় টেস্ট খেলার টেকনিক? এই টেকনিকে ২০ ওভারের ম্যাচ সামলে দেওয়া যায়, কিন্তু টেস্ট? যেভাবে পন্তরা উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন, তাতে সুনীল গাভাস্কার থাকলে হয়তো আরও একবার বলতেন, স্টুপিড, স্টুপিড, স্টুপিড!
বিজ্ঞাপন
ভারতের ব্যাটিংয়ের যা হাল, তাতে পিচ কোনো বিষয় নয়। ইডেনের ঘূর্ণি উইকেটই হোক, বা গুয়াহাটির পেটানো উইকেট, হাল একই হবে। ঠিক এই কথাটাই তো বলেছিলেন ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর। ইডেনে আড়াই দিনে টেস্ট হারের পর বলেছিলেন, উইকেটের দোষ দিয়ে কী হবে? ভালো ব্যাট করতে হবে। নইলে জেতা যাবে না। গম্ভীরই যে ঠিক তা প্রমাণ করে দিলেন সাই সুদর্শন, ধ্রুব জুরেল ও নীতীশ কুমার রেড্ডিরা।
বিজ্ঞাপন
টেস্ট ব্যাটিংটাই যেন ভুলতে বসেছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। বড় টার্গেট তাড়ায় ১২২ রানের মধ্যেই ভারতের সাত ব্যাটার আউট হয়েছেন। টপ ও মিডল অর্ডারে দাঁড়াতে পারেননি কেউই। ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারেরা ভারতকে হারিয়েছিলেন। গুয়াহাটিতে সাত উইকেটের মধ্যে জানসেনই নিয়েছেন চারটি। অর্থাৎ, এখানে ভোগাচ্ছেন পেসাররা।
ওপেনার লোকেশ রাহুলের আউটটাই দেখা যাক। পেস বোলারদের সামলাচ্ছিলেন। স্পিন আসতেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। কেশব মহারাজের বল পিচে পড়ে সামান্য ঘুরল। ব্যাস! সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন। বল ভালো ছিল। কিন্তু রাহুলের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারের উচিত ছিল তা সামলানো। পারলেন না রাহুল। এরপর একমাত্র যশস্বী জয়সওয়ালকে যা একটু সাবলীল দেখাচ্ছিল। সেই তিনিও সাইমন হারমারের বলের বাউন্সই সামলাতে পারলেন না। আর একটু দেরিতে খেললে ক্যাচ উঠত না। তাড়াতাড়ি শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি।
ইডেনে হারের পর পন্ত বলেছিলেন, অজুহাত দিতে চান না। ১২৪ রান করা উচিত ছিল। তারা পারেননি। গুয়াহাটিতে তো তার প্রয়োজন ছিল না। ৪৮৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মারেন পন্থ। সকলে জানেন, তিনি এ ভাবেই খেলেন। কিন্তু এই টেস্টে তো দ্রুত রান করার প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছিল উইকেটে পড়ে থাকার। পন্থ নতুন নন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁর। সেই তিনিই জানসেনের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে শট মারতে গেলেন। এটা তো টি-টোয়েন্টি চলছে না। কেন টেস্ট সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন ভারতের ব্যাটারেরা। অধিনায়ক যে ভাবে উইকেট ছুড়ে দিলেন, তা ক্ষমার অযোগ্য।
ইডেনে ভারতকে আড়াই দিনে হারানোর পর গুয়াহাটিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সেনুরান মুথুসামির প্রথম সেঞ্চুরি ও মার্কো জানসেনের নাভার্স-নাইন্টিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৮৯ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের কুলদীপ ৪টি ও বুমরাহ-সিরাজ ও জাদেজা ২টি করে উইকেট নেন।
এফআই