রাইজিং স্টার এশিয়া কাপে কাছাকাছি গিয়েও শিরোপা পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে সুপার ওভারে হেরেছে বাংলাদেশ। শিরোপা জিততে না পারলেও ভারতের মতো দলকে হারিয়ে ফাইনাল খেলাটাও বাংলাদেশের জন্য প্রাপ্তি। সদ্য সমাপ্ত এই আসরে দলের এমন সাফল্যের পেছনে বড় অবদান হাবিবুর রহমান সোহানের। 

রাইজিং স্টার এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের পাওয়ার হাউজ ছিলেন সোহান। বেশিরভাগ ম্যাচেই ব্যাট হাতে ইনিংসের শুরুতে শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ৫ ম্যাচ খেলে ৫৭ গড়ে করেছেন ২২৮ রান। আসরের তৃতীয় আর দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন এই ওপেনার। সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছিলেন তিনি। ৩৫ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে দেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা এখন তারই দখলে।

কাতার অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টের পর্দা নামলেও এখনো দেশে ফেরেনি বাংলাদেশ দল। কাতার থেকে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলেছেন সোহান।

ফাইনালে সুপার ওভারে হারের পর রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়েছে?

সোহান: যেভাবে হেরেছি ঘুম তো না হওয়ারই কথা। সহজ ম্যাচটা আমরা হেরেছি। খারাপ লাগা তো আছেই। অবশ্যই কষ্ট লাগছিল। ফাইনাল ম্যাচ ছিল, সবসময় কিন্তু আমরা ফাইনাল খেলতে পারি না। সেই ক্ষেত্রে আসলে আমাদের জেতা উচিত ছিল। আমরা অবশ্যই শিরোপা ডিজার্ভ করি।

আপনার কাছে ফাইনালে হারের মূল কারণ কী?

 সোহান: হয়নি, সেটা আসলে ভাগ্য খারাপ। আমরা বোলিং কিন্তু ভালো করেছি, ব্যাটিংটা দলগতভাবে আমরা ভালো করতে পারিনি। আমাদের যে ব্যাটাররা ছিল তারা আসলে ভালোভাবে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। এখানেই আমরা আসলে ম্যাচটা হেরে গেছি।

কোন পরিকল্পনা থেকে সুপার ওভারে সাকলাইন?

সোহান: সুপার ওভারে কিন্তু সবারই লক্ষ্য থাকে ছয় বলে ছয়টা ছক্কা মারার। যত রান বেশি করা যায় এটাই তো আসলে পরিকল্পনা থাকে। আমাদের আসলে টার্গেট ছিল যত বেশি রান করা যায়। এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে গেছে, ছয়তো আপনাকে মারতেই হবে সুপার ওভারে। আর ছক্কা মারতে গেলে তো রিস্ক থেকেই যায়। দলের মধ্যে যারা ভালো টাচে আছে তাদেরকেই তো সুযোগ দেবে। আমি ছিলাম, জিসান ছিল, সাকলাইন তো মাত্রই ম্যাচটা ড্র করে আসলো। সবাই মিলে আসলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমাদের তিনজনকে পছন্দ করেছিল সবাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হয়নি।

ফিল্ডিং নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, কীভাবে দেখছেন?

সোহান: প্রথম তিন ম্যাচ যদি দেখেন, খারাপ হয়নি ফিল্ডিং। আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই হয়েছে, প্রথম তিন ম্যাচে ফিল্ডিং আমরা খুব ভালো করেছি। ভারতের সাথে এবং গতকালকের (ফাইনাল) ম্যাচটা ফিল্ডিং খারাপ হয়েছে। একটু বেশি মিস হয়েছে ক্যাচগুলো। 

দেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি করলেন...

সোহান: দেশের হয়ে যে কোনো কিছু করা অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। আমারও ভালো লাগছে। আর স্পেশালি বেশি ভালো লাগার কারণ আমি প্রথমবার দেশের হয়ে দেশের বাইরে কোথাও ট্যুর করতে এসেছি। দলের হয়ে খেলছি, কন্ট্রিবিউট করতে পেরেছি।

ভারতের বিপক্ষে রান পেতে পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন এনেছিলেন?

সোহান: বড় দলের বিপক্ষে রান করা কিন্তু স্পেশাল। যে কোনো ব্যাটারের ক্ষেত্রেই সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল ম্যাচে যদি রান করা যায় তাহলে কিন্তু আপনার আত্মবিশ্বাসে অনেক বেড়ে যাবে। এগুলো সবসময় স্পেশাল।

এই সিরিজে ধারবাহিক রান পেয়েছেন, ব্যাটিংয়ে উন্নতির রহস্য কী?

সোহান: আমার স্কিলে এখনো কিছুটা সমস্যা আছে। আমি ধারাবাহিক না। স্কিল নিয়ে আমি গত দুই বছরে এইচপিতে কাজ করেছি। আপনি যদি দেখেন দুই বছর আগে আমার স্কিল আরো খারাপ ছিল। এখন অনেকটা উন্নতি করেছি, আরো কিছু কাজ করছি। সাথে অবশ্যই আমার ব্যাটিং পজিশন নিয়েও কাজ করব।

আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে কোন স্কিলটা আপনাকে সাহায্য করে?

সোহান: একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে কিন্তু আপনাকে সাহস নিয়ে খেলতে হবে। ছোট থেকেই এটা আমার খেলার ধরন। অনেকে অনেকভাবেই খেলে, এটা আমার ন্যাচারাল। অনেকে ক্রিজে সেট হয়ে তারপরে শট খেলে, আবার কেউ শুরু থেকেই শট খেলার চেষ্টা করে। তো আমি যেভাবে শিখছি আমি ওভাবে খেলার চেষ্টা করি। আমি আসলে ফেয়ারলেস ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসি।

অফ সাইডে কম শট খেলেন, এটা নিয়ে কাজ করছেন? 

সোহান: হ্যাঁ, আমি তো আপনাকে বললাম যে আমার কিছু স্কিলের সমস্যা আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করব। এটাও মাথায় রয়েছে, অলরেডি এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

'এ' দল পর্যন্ত আসতে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন?

সোহান: আমি শুধু আমার প্রসেস অনুযায়ী কাজ করেছি, কষ্ট করেছি। বাকিটা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এর বেশি কিছু বলবো না। আর আমার এই পর্যন্ত আসার পেছনে আরো অনেকের অনেক অবদান রয়েছে। আমি এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলিনি। যেদিন আমার স্বপ্ন পূরণ হবে সেদিন আমার পেছনে যাদের শ্রম আছে তাদের কথা বলব।

নিজেকে জাতীয় দলে দেখেন?

সোহান: এটা প্রত্যেকটা ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে, জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা। আর জাতীয় দলে খেলাটা আসলে চ্যালেঞ্জ। কারণ এখানে আপনার খারাপ করার কোনো সুযোগ নেই। খারাপ করলে জায়গা হারানোর শঙ্কা থাকে। আপনার জায়গায় তখন অন্য কেউ প্রবেশ করবে। আর আপনি যে জায়গায় খেলবেন সেই জায়গা ধরে রাখতে হলে কিন্তু আপনার রান করতে হবে। তো অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং এটা।

ক্রিকেটে আপনার আইডল কে?

সোহান: আমার তেমন কোনো আইডল নেই। কাউকে ফলো করি না, হ্যাঁ, যদি পছন্দের কথা বলেন তাহলে লোকেশ রাহুলের খেলা আমার খুব ভালো লাগে।

এসএইচ/এইচজেএস