ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এখন কোথায় আছেন, কী করছেন। জানতে পারলে ভালো হতো। কেইন উইলিয়ামসন কি এখনো থাকবেন ঠাণ্ডা, শান্তশিষ্ট? উৎসবের মাত্রাটা কেমন হবে নিউজিল্যান্ডে? 

ভাবনা, চিন্তা, কল্পনা সব দূরে ঠেলে এখন একটা তথ্যই পাঠকের জানা সবচেয়ে জরুরি- টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। তারা জিতেছে প্রথম বৈশ্বিক কোনো শিরোপা, বহু বহু বছর অপেক্ষার পর। 

সাউদাম্পটনের আকাশ কাঁদছিল প্রথম দিন থেকেই। অভিমানী মেঘের পর জলের ফোঁটা যেন জানান দিচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের কষ্ট। একটার পর একটা টুর্নামেন্ট গিয়েছে। তারা ফিরেছে কেবল আক্ষেপ নিয়েই। শেষ দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো। বৃষ্টিতে পুরো টেস্টটা ভেসে গেলেও অবশ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া যেত। কিন্তু সেটা হতে হতো যৌথভাবে। তাতে কী আর স্বাদ মেটে!

সৃষ্টিকর্তাও বোধ হয় চাইছিলেন না তেমন কিছু। প্রায় পুরো পাঁচ দিনই খেলা হলো বৃষ্টি আর মেঘের চোখ রাঙানিতে। শেষ দিনে এসে সব কেমন আলোকোজ্জ্বল। বৃষ্টির দেখা নেই, আকাশ পুরোপুরি রৌদ্রজ্জ্বল। খেলা হলো পুরোদমে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত গুটিয়ে গেল ১৭০ রানে। ৫৩ ওভারে নিউজিল্যান্ডের করতে হতো ১৩৮ রান। নিউজিল্যান্ড লক্ষ্যে পৌঁছে গেল আট উইকেট হাতে  রেখেই।

মাঝের পথে হাল ধরলেন কেইন উইলিয়মসন, রস টেইলর। যেমনটা তারা ধরে আছেন গত এক দশকের বেশি সময়। আগে বারবার পা হড়কেছেন, এবার তেমন কিছু হলো না আর। এই দুইজনকে ক্রিজে রেখেই নিউজিল্যান্ডের প্রথম শিরোপা জেতানোর উৎসবটা যে চেয়েছিলেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। নয়তো স্লিপে চেতেশ্বর পূজারা অথবা জসপ্রিত বুমরাহ কেন এত সহজ ক্যাচ ফেলবেন!

শেষ অবধি দুই বছরের রোমাঞ্চের চোরাবালি, নানা চড়াই-উৎরাই, বাঁধা পেরিয়ে আসা ফাইনাল জিতেছে কেইন উইলিয়ামসনের দল। কিন্তু বাঁধনহারা উল্লাস আর হলো কোথায়। রস টেইলর চার মারার পর কেইন উইলিয়ামসন গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাকে, পরে কোহলিকে। তাতেই শেষ!

কিউইদের উচ্ছ্বাস অবশ্য ফুটে উঠল গ্যালারিতে। এক টুকরো নিউজিল্যান্ড হয়ে পড়ল সাউদাম্পটনের গ্যালারি। কয়েক শ কিউই সমর্থকই মাতিয়ে রাখলেন সবটা। ‘ট্রফি কামিং হোম’ চিৎকার করে জানান দিলেন চারপাশে। উচ্ছ্বাস অবশ্য দেখা গেল নিউজিল্যান্ডের ড্রেসিংরুমেও। টিম সাউদি মধ্যমণি হলেন, তাকে কেন্দ্র করে উল্লাস। সেটিও মিনিট খানেকের জন্য।

কিন্তু এসব উদযাপন নিশ্চয়ই জানান দেবে না নিউজিল্যান্ডের ট্রফি জয়ের লম্বা পথ। মার্টিন ক্রো থেকে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম হয়ে কেইন উইলিয়ামসন। তারা সবসময় থেকে গেছেন আড়ালে। শিরোপাটাও যেন অভিমান করে সরে গেছে দূরে।

এবারও তেমন হবে কি না, শঙ্কা ছিল শুরু থেকেই। ৫৩ ওভারে ১৩৮ রানের লক্ষ্য খেলাটাকে সহজ করে দিয়েছিল এমনিতেই। আরও সহজ করে দেন দুই ওপেনার টম লাথাম আর ডেভেন কনওয়ে। লাথাম অবশ্য আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। তার আগে করেন ৯ রান।

এরপর উইলিয়ামসন ক্রিজে আসার কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে যান কনওয়ে। তার বিদায়ের পর অবশ্য নিউজিল্যান্ডকে আর কোনো বেগ পেতে হয়নি কোনো। উইলিয়ামসন ৫২ আর টেইলর ৪৭ করে অপরাজিত থেকে দলকে ভিড়িয়েছেন জয়ের বন্দরে।

ঘিরে থাকা অজানা অনিশ্চয়তা আর ঘিরে ধরেনি কিউইদের। সবকিছুকে উড়িয়ে শিরোপা উৎসবে মাতলো কিউইরা। বহু বহু বছরের অপেক্ষার পর। আরও অনেক অনেক বছর পরও যখন বলা হবে, আভিজাত্যের টেস্ট ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াইয়ের প্রথম চ্যাম্পিয়ন কে? নিউজিল্যান্ডের নামটাই আসবে। এই জন্যই কি নিউজিল্যান্ডের শিরোপা জেতার এত এত দিনের অপেক্ষা?

এমএইচ/এইচকে