‘ধর তক্তা মার পেরেক’ -প্রবাদটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? অস্ট্রেলিয়া দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের বাস্তব চিত্র এটি। ২৯ জুলাই বাংলাদেশে এসে ১০ দিনের সফর শেষে তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরে যাবে অজিরা। এর মধ্যে ৩ দিনের কোয়ারেন্টাইন। বাকি এক সপ্তাহে ৫টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া। তড়িঘড়ি করে ঘরের মাঠে এই সিরিজের দল নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া শর্ত অনুযায়ী সিরিজ শুরুর আগে অন্তত ১০ দিন কোয়ারেন্টাইন করতে হবে সিরিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল সদস্যকে। সে হিসেবে ইতোমধ্যে কোয়েরেন্টাইনে ঢুকে পড়েছেন ম্যাচ অফিশিয়াল, গ্রাউন্ডসম্যান, হোটেল স্টাফসহ সম্প্রচারের দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যরা। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দল আছে জিম্বাবুয়েতে। সেখানে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকায় সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের কোয়ারেন্টাইন করতে হবে ৩ দিন।

সুযোগ না থাকায় অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য আলাদা করে কোনও দল যে ঘোষণা করা হচ্ছে না, সেটি আগেই জানিয়েছিল বিসিবি। জিম্বাবুয়ে সফরের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে যারা আছেন, তারাই খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

ঢাকা পোস্টকে নান্নু বলেন, ‘জিম্বাবুয়েতে আমাদের যে স্কোয়াডটা আছে, সেটিই দেশে এসে জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকবে। এটিই মূলত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির স্কোয়াড।’ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে আগামীকাল (বুধবার) দল ঘোষণার কথা রয়েছে বোর্ডের।

কিন্তু বিপত্তি তৈরি হয়েছে অন্য জায়গায়। পারিবারিক কারণ আর ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইনের মারপ্যাঁচে মুশফিকুর রহিমকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। পারিবারিক কারণে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের বাইরে চলে এসেছেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। লিটন দাসও অস্ট্রেলিয়া সিরিজ খেলবেন না একই কারণে। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন তামিম ইকবাল। দলের সঙ্গে থাকলেও ইনজুরির জন্য মুস্তাফিজুর রহমানের খেলা অনিশ্চিত।

বিকল্পসহ জিম্বাবুয়েতে এখন খেলোয়াড় আছেন ১৭ জন। এই দলটিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলবে। প্রশ্ন উঠেছে, জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে টানা এক মাস কাটিয়ে এমনিতেই হাঁপিয়ে ওঠার কথা খেলোয়াড়দের। এর সঙ্গে যেভাবে পারিবারিক কারণ আর চোট সমস্যা বড় হচ্ছে, তাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের আগে বিপদের অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।

অজিদের বিপক্ষে ৩ দিনের কোয়ারেন্টাইনের পর এক সপ্তাহে ৫টি ম্যাচ। সে ধকল কাটিয়ে সুস্থ থাকা বড় চ্যালেঞ্জ বৈকি। ব্যস্ত সূচির প্রভাব পড়বে মাঠের লড়াইয়েও। সঙ্গে ১৭ জনের অনেকেই ফর্মে নেই। সেক্ষেত্রে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ১৩-১৪ জনের মধ্যে একাদশ গড়তে হবে পাঁচ ম্যাচেই। কাজটি সহজ নয়।

বোর্ডের বিপত্তি এখানেই। সিরিজটি গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের সামনে। কোনরকম অজিদের বিদায় দিতে পারলে স্বস্তির ঢেকুর তুলতে পারবে আয়োজকরা।

জাতীয় দলের আরেক নির্বাচক অবশ্য জানালেন, ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইনের জন্য ঈদের আগে সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করেছেন দেশে থাকা সংশ্লিষ্ট সবাই। তখনও জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ মাঠে গড়ায়নি। সে সময় স্কোয়াডের সদস্য সংখ্যা ছিল ২০ জনের উপরে। এজন্য দেশে বিকল্প তৈরি রাখার ভাবনা ছিল না বোর্ডের। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে ঘটে গেছে অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনা।

সেই নির্বাচক জানালেন, ‘এর আগে আমরা ১৪-১৫ জনের স্কোয়াড নিয়েও ট্যুর করেছি। এখন তো স্কোয়াডে সদস্য সংখ্যা ১৭ জন। মোটামুটি ৭ দিনে ৫টি ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। এর মধ্যে যদি কিছু ঘটে যায়, তাহলে আমাদের তো আর কিছু করার নাই। যা হয়েছে এখানে তো আমাদের কারও হাত নাই। এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কোন দুর্ঘটনার কথা তো আমরা আগাম বলতে পারব না।’

সঙ্গে যোগ করেন তিনি, ‘১৭ জন তো আমাদের জিম্বাবুয়েতে আছেই। আশা রাখি তেমন কোনও সমস্যা হবে না। ৫ ম্যাচের জন্য ১৭ জনের স্কোয়াডও কিন্তু অনেক বড়। আমাদের স্কোয়াড কিন্তু ২০ জনের মতো ছিলই, শেষ মুহূর্তে এসে কমে গেছে। যখন ঘটনাগুলো হয়েছে, ততদিনে আমদের ডেটলাইন পার হয়ে গেছে। তো এখন আর কিছু করারও নাই।’

এক নজরে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য বাংলাদেশ স্কোয়াড-

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), নাসুম আহমেদ, শেখ মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন ও রুবেল হোসেন।

টিআইএস/এটি