রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ইতিহাস গড়া জয় ভারতের
সতীর্থদের আলিঙ্গনে উষ্ণ জয়ের নায়ক রিশাভ পান্ট/ছবি:সংগৃহীত
বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের প্রতিদিনই যেন ছিল ঘটনাবহুল। তেমন এক সিরিজের শেষটা রোমাঞ্চকর না হলে ঠিক জমতো না। ভাগ্যিস শেষটা ম্যাড়মেড়ে হয়নি! ব্রিসবেনে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা এক ম্যাচ দিয়ে শেষ হলো বোর্ডার গাভাস্কার সিরিজ। হার, ড্র, টাই সব ধরনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে ভারত জিতল ৩ উইকেটে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অজিদের মাটিতে ভারত পেল টানা দুই সিরিজ জয়।
ভারতের সামনে ছিল অজস্র ইতিহাস। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অজিদের মাটিতে টানা দুই সিরিজ জয়, গ্যাবায় ৩৩ বছর পর অজিদের হারের বিস্বাদ দেয়ার কিংবা চতুর্থ ইনিংসে গ্যাবায় সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সব ইতিহাস পায়ে ঠেলে দিনের শুরুটা কিনা আভাস দিচ্ছিল বেরসিক এক ড্রয়ের!
বিজ্ঞাপন
আগের দিনে রোহিত শর্মাকে হারানো ভারত দিনের শুরুটা করেছিল দেখে শুনে। ৯১ রান নিয়ে শুভমান গিল যতক্ষণে নাথান লায়নের বলে আউট হয়ে মাঠ ছাড়ছেন, দলের ঝুলিতে যোগ হয়েছে ততক্ষণে মাত্র ১৩২ রান। যদিও আস্কিং রেটের হিসাব টেস্টে করা হয় না, তবু দিনের শুরুতে তিনের আশেপাশে থাকা ওভারপ্রতি প্রয়োজনীয় রানটা ততক্ষণে গিয়ে ঠেকেছে চারে।
আউটের আগে গিল অবশ্য বেশ রানের গতি বাড়ানোয় মনোযোগী হয়েছিলেন খানিকটা। মিচেল স্টার্কের এক ওভারেই এসেছিল ২১ রান, এরপরই ছন্দপতন। গিল যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে যেন শুরু করলেন ঠিক সেখান থেকেই। তবে ২২ বলে ২৪ রান করে সাজঘরে ফিরতে হলো তাকেও। জয়ের লক্ষ্যে রিশাভ পান্টকে তুলে আনা হলো ব্যাটিং অর্ডারে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের উপরে। তবে শুরুতে একটু দেখেশুনেই খেলছিলেন পান্ট।
বিজ্ঞাপন
অন্য প্রান্ত যেমনই থাক, চেতেশ্বর পুজারা ছিলেন তার মতো হয়েই। তবে সে রক্ষণদেয়াল ভাঙলো প্যাট কামিন্সের ছোবলে। ব্যাক অফ লেন্থ বল ভেতরের কোণা এড়িয়ে আঘাত হানে প্যাডে। এলবিডব্লিউ হয়ে যখন ফিরছেন পুজারা, দলের চাই আরও ১০০ রান, হাতে আছে বিশেরও কিছু কম ওভার। ড্রকেই মনে হচ্ছিল ম্যাচের নিয়তি।
এরপরই রানের চাকায় ফেরে গতি, ‘প্রতি-আক্রমণই সেরা রক্ষণ’ মন্ত্রবলে পরের ৩২ বলে ভারত তোলে ৩৭ রান। ২৬৫ রানে কামিন্সেরই ড্রাইভিং লেন্থের এক বলে শর্ট কভারের উপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ব্যর্থ হন মায়াঙ্ক, তীরে এসে তরী ডোবার শঙ্কা তখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ভারত শিবিরে।
ওয়াশিংটন সুন্দরকে সঙ্গে নিয়ে সে শঙ্কা তাসমান সাগরে ভাসান পান্ট। পেন্ডুলামের মতো এদিক-ওদিক দুলতে থাকা ম্যাচটা শেষমেশ ভারতের পক্ষেই চলে এলো দিনের ছয় ওভার বাকি থাকতে। কামিন্সের এক ওভারে ১১ এর পর লায়নের ওভারে এলো ১৫ রান, ভারত তখন জয়ের নেশায় বুঁদ। তখনই ঘটলো অ্যান্টি-ক্লাইম্যাক্স। জয়ের বন্দর থেকে দশ রান দূরে থামেন সুন্দর, লায়নের বলে বোল্ড হয়ে।
তিন রান দূরে থামেন পরের ব্যাটসম্যান শার্দুল ঠাকুর। অফ স্ট্যাম্পে কোনাকুনিভাবে আসতে থাকা হেইজেলউডের ব্যাক অফ লেন্থ বল তুলে দেন স্কয়ার লেগে, লায়নের তালুবন্দি হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। তবে তার আগেই রানের জন্যে অপর প্রান্তে চলে গেছেন পান্ট।
পরের বলটা হলো লেগ সাইডে, অনেক বাইরে দিয়ে। হেইজেলউডের উদ্দেশ্য ছিলো পান্টকে স্ট্রাইকে রাখা, পরের ওভারটায় যে তাহলে ‘টেইল-এন্ডার’ নবদ্বীপ সাইনিকে পাওয়া যায়! পরের বলে যা হলো তাতে সবকিছু চলে যায় হিসেবের বাইরে। অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে করা বলটাকে পান্ট আলতো ছোঁয়ায় ঠেলে দেন মিড অফে, ফিল্ডারকে হারিয়ে সেটা ছিটকে পড়ে বাউন্ডারিতে। সব শঙ্কা, সব বাঁধা উপেক্ষা করে ভারত পায় অবিস্মরণীয়, শ্বাসরুদ্ধকর ও অবশ্যই ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয়।
এনইউ/এটি