জানতে পারলে মন্দ হতো না। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে মান্না দের সেই কালজয়ী গানের লাইনটি কি গাওয়া হয়? দলের পুরোনো কোন সদস্য কি আনমনে গেয়ে ফেলেন- ‘কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো (দিনগুলো) সেই, আজ আর নেই!’ না নেই, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেই দিনগুলো যে একেবারেই নেই। কতদিন গলা ছেড়ে ক্রিকেটাররা গান না, ‘আমরা করবো জয়! আমরা করবো জয়! আমরা করবো জয়, একদিন...’

লাল-সবুজের ক্রিকেটের সুর, তাল, লয়- সবই তো ডুবতে বসেছে। হারানোর তালিকায় নাম উঠেছে অনেক। বাইশ গজের দুর্দশা, ইনজুরি আর অভিমান- সব মিলিয়ে টালমাটাল। সেই যে বিশ্বকাপ শুরুর পর মুখ বন্ধ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি, সেই মুখ খুলছে না কিছুতেই। টানা এতোটা সময় সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে চলেছেন নাজমুল হাসান পাপন, এমন নজীর বোধহয় এর আগে দেখেনি কেউই। বোর্ড কর্তাদের মুখ খোলানোর দায়িত্ব নিতে যেন ভুলে গেছেন ক্রিকেটাররা! তারা ভালো না করলে বন্ধ মুখগুলো খুলবে কীভাবে?

বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে অন্ধকার অধ্যায় চলছে, এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব জরুরি। অন্ধকার সরিয়ে এক টুকরো আলোই ফেরাতে পারে এদেশের ক্রিকেটের ‘মৃতপ্রায়’ প্রাণ। তবে সে লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম তো আর কম হচ্ছে না। বাইশ গজের যুদ্ধে ফল পক্ষে আসছে না কিছুতেই। 

ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পেরে উঠল না অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। হার ০-৩ ব্যবধানে। অধিনায়ক মুমিনুল হক চ্যালেঞ্জ নিলেন ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্র শুরু হলো এই সিরিজ দিয়ে। পোশাক বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে বল আর ফরম্যাট। ফায়দা হচ্ছে কই? চট্টগ্রাম টেস্টেও পরাজিত দলের নাম বাংলাদেশ।

অন্ধকার সরিয়ে একটুকরো আলোর খোঁজ করতে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের মুখোমুখি বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায়। এ ম্যাচের আগে অবশ্য কিছু ভালো খবর আছে টাইগার শিবিরে। ইনজুরি কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর ফিরেছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাকিবের ফেরা আপ্লুত করেছে খোদ অধিনায়ককে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে একাদশে হবে, ‘সাত ব্যাটসম্যান আর চার বোলারের।’ সাইফ হাসান না থাকায় ওপেনিংয়ে অভিষেক হতে পারে নাঈম শেখ আর মাহমুদুল হাসান জয়ের মধ্যে যেকোনো একনজনের। যেখানে ডানহাতি হওয়ায় জয়ের দিকে পাল্লাটা একটু বেশিই ঝুকে আছে। অধিনায়ক মুমিনুল যেমন বললেন, ‘ওপেনিং কম্বিনেশন ডান-বাম হতে পারে, হয়তো বাম হাতি দুইজনও হতে পারে, আসলে ডান বাম  হওয়ারই চান্স বেশি।’

আলোচনা এ ম্যাচের উইকেট ঘিরে। পাকিস্তান উপমহাদেশীয় দল হওয়ায় মন্থর উইকেটের ফায়দা নিতে পারছে না বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রামে স্পোর্টিং উইকেটে খেলে লাভ হয়নি স্বাগতিকদের। উল্টো ফায়দা নিয়েছে পাকিস্তান। এবার ঢাকার উইকেটে কেমন দেখলেন মুমিনুলরা?

মুমিনুলের প্রত্যাশা, ‘এটা সবাই জানে, উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্পিন ভালো খেলে। তাই এখানকার দলগুলোর বিপক্ষে স্পিন উইকেটে না খেলাটাই ভালো। কেবল আমি নই, বিশ্বে সব দলই তাই করবে। তাই আমার মনে হয় ফ্লাট উইকেটে খেলাটাই ভালো হবে।’

সবশেষে পাকিস্তানের জয় দিয়ে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বাস ফেরানোর চ্যালেঞ্জটা একেবারেই সহজ নয়। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটা এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের যে মানসিক অবস্থা, দেশের ক্রিকেটে যে গুমোট আবহাওয়া, সবকিছুর সমাধান কেবল মিলতে পারে মাঠের ক্রিকেটেই। জয়ই এনে দিতে পারে এর উত্তম সমাধান।

টিআইএস/এমএইচ