মিরাজ-মুস্তাফিজের সঙ্গে আলোচনায় আম্পায়ার সৈকতও
দিনশেষে মিরাজের নেতৃত্বে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ দল -ছবি : বিসিবি/রতন গোমেজ
করোনার কারণে প্রায় ৩৫০ দিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। প্রত্যবর্তনের এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের একাদশেও প্রত্যাবর্তন হয়েছে একাধিক ক্রিকেটারের। যারা টাইগারদের হয়ে সব শেষ ম্যাচের একাদশে ছিলেন। তাদের মধ্য থেকে লড়াইয়ে ফিরে আলো ছড়িয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমানরা। চলমান বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে অভিষেক হয়েছে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে সৈকতের। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে মিরাজ-মুস্তাফিজদের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন তিনিও।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের সবশেষ ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। সেই ম্যাচে মিরাজ, মুস্তাফিজদের পাশাপাশি ইনজুরি আর নিষেধাজ্ঞার কারণে দলে ছিলেন না সাকিব আল হাসান, সাদমান ইসলাম অনিক। দলে ফিরেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম শতক তুলে নিয়েছেন মিরাজ। অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন সাকিব-সাদমান। বল হাতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিয়েছেন মুস্তাফিজ। আম্পায়ার সৈকত আলোচনায় এসেছেন তার নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় দিনে আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যে ফিফটির দেখা পান সাকিব, তবে লিটন ফেরেন ৩৮ রান করে। সাকিবও নিজের ইনিংসটিকে তিন অঙ্কে রূপ দিতে ব্যর্থ হন। রাকিম কর্নওয়েলকে নিজের উইকেট উপহার দেন ৬৮ রান করে। সাকিব-লিটন ফেরার পর লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মিরাজ।
মিরাজ যখন উইকেটে আসেন, তখন ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪৮ রান স্বাগতিকদের স্কোর বোর্ডে। পরে টাইগাররা আরও যোগ করে ১৮২ রান। যেখানে মিরাজ একাই তুলেছেন ১০৩ রান। অষ্টম উইকেট জুটিতে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে ৪৪ ও নবম উইকেটে নাঈম হাসানের সঙ্গে ৫৭ রান যোগ করার পর শেষ উইকেটে মুস্তাফিজকে সঙ্গে নিয়ে নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। পরে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ১০৩ রান করে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুঁটিয়ে যায় ৪৩০ রানে।
বিজ্ঞাপন
এরপর শুরু হয় মুস্তাফিজ শো। ক্যারিবীয় ওপেনারদের একেবারেই স্বস্তিতে থাকতে দেননি তিনি। স্টক ডেলিভারির সঙ্গে ইয়র্কার আর ইন স্যুইংয়ে দুই ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেলকে নাকাল করেন কাটার মাস্টার খ্যাত এই পেসার। তাতে বরং আক্ষেপই বাড়ল টাইগার শিবিরে, আরেকটি পেসার কি রাখা যেত না একদশে? শুধু ভীতি ছড়িয়েই ক্ষান্ত হননি মুস্তাফিজ, লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তুলে নিয়েছেন ক্যাম্পবেল (৩) ও শাইনি মোসেলির (২) উইকেট।
পরে এনক্রুমা বোনারকে নিয়ে সাবধানে দিন পার করেন অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। অবিচ্ছেদ্য ৫১ রানের জুটিতে দলকে আর কোন বিপদ হতে না দিয়ে ব্র্যাথওয়েট ৪৯ ও বোনার ১৭ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেন। ২ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রানে দিন শেষ করা ক্যারিবীয়রা প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে আছে ৩৫৫ রানে।
এদিকে এই ম্যাচ দিয়েই টেস্টে অভিষেক হয়েছে আম্পায়ার সৈকতের। ম্যাচের প্রথম দিন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলামকে আউট দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। উইন্ডিজের বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে সাদমানকে এলবিডব্লিউ দেন সৈকত। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল চলে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে দিয়ে। এছাড়াও বাংলাদেশ ইনিংসে কয়েকটি সিদ্ধান্ত তার বিপক্ষে যায়।
উইন্ডিজ ইনিংসে আরও বেশি চাপে পড়েন সৈকত। মুস্তাফিজের করা পর পর দুই ওভারে তার নেওয়া সিদ্ধান্ত চার বার চ্যালেঞ্জ করে দুই দল। উইন্ডিজ ইনিংসের ৫ম ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাম্পবেলের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদন মুস্তাফিজের। আম্পায়ার সৈকত আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ, রায় যায় বাংলাদেশের পক্ষে। পরের বলেই আবারও জোরালো আবেদন, এবার আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার, কিন্তু চ্যালেঞ্জ জানান ব্যাটসম্যান মোসেলে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় পরিষ্কার ইনসাইড এজ। বেঁচে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
৭ম ওভারের শেষে বলে মোসেলের বিপক্ষে আবারও আবেদন মুস্তাফিজের। আম্পায়ারের দেওয়া নট আউটের সিদ্ধান্তে রিভিউ বাংলাদেশের, বল ব্যাটের সাথে সংযোগ না হলেও আম্পায়ার কলের বদলৌতে বেঁচে যান মোসেলে তবে ১১তম ওভারের শেষ বলে আর শেষ রক্ষা হয়নি অভিষিক্ত এই বাঁহাতির। মুস্তাফিজের করা ১১ তম ওভারের পঞ্চম বলে জোরালো আবেদন এলবিডব্লিউর।
আম্পায়ার সৈকত দিলেন নট আউটের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ রিভিউ নিলেও হেরে যায়। কিন্তু পরের বলেই আবারও আবেদন, এবার আম্পায়ার দিলেন আউট, রিভিউ নিল ২৩ বল খেলা মোসেলে। টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার আউট দেখা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ৪৩০/১০ (মিরাজ ১০৩, ৫৯, সাকিব ৬৮, সাদমান ৫৯; ওয়ারিক্যান ৪/১৩৩, কর্নওয়াল ২/১১৪)
উইন্ডিজ: ৭৫/২, ২৯ ওভার (ব্র্যাথওয়েট ৪৯*, বোনার ১৭*; মুস্তাফিজ ২/১৮)
টিআইএস