ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিং সংকট দিনকে দিন তীব্র হচ্ছে। রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে যেমন তুমুল সমালোচনা তেমনি ফুটবলার, কর্মকর্তার মন্তব্য ও আচরণে রেফারিরাও ক্ষুব্ধ। বিষয়টি অনেকটা যেন স্নায়ুযুদ্ধ! 

জাতীয় দল ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার সহকারী রেফারিকে শারীরিক আঘাত করার অভিযোগটি এখন ফরেনসিক বিভাগে তদন্তাধীন। এর মধ্যে কয়েকজন রেফারি এক হয়ে দাবি তুলেছেন জামাল ভূঁইয়া এক সাক্ষাতকারে রেফারিকে মিথ্যেবাদী বলে মন্তব্য করেছে; এজন্য জামাল ভূঁইয়া দুঃখ প্রকাশ না করলে রেফারিরা জামাল ভূঁইয়ার দলের ম্যাচে বাঁশি বাজাবেন না। 

আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহীতে সাইফ স্পোর্টিং ও স্বাধীনতা সংঘের মধ্যে ম্যাচ। রাজশাহী ভেন্যু দূরত্ব হওয়ায় দুই দিন আগে রেফারি নির্বাচন হয় ও এক দিন আগে রেফারি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হন৷ আগামীকাল ম্যাচের জন্য নির্বাচিত সবাই রাজশাহীর ম্যাচ পরিচালনা করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। ফলে এখন অন্য রেফারি খুঁজতে হচ্ছে  বাফুফেকে। শীর্ষ পর্যায়ের রেফারিরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে নিচের স্তরের রেফারি দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা ছাড়া উপায় থাকবে না বাফুফের। 

গতকাল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের রেফারিদের নিয়ে এক জুম সভা হয়। সেই সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পর জামাল ভূঁইয়ার বিষয়টি উথাপিত হয়। রেফারিরা এই বিষয়ে অনড় থাকায় পরবর্তীতে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক কিছুক্ষণ পৃথক জুম সভায় যোগ দেন।সেখানে রেফারিরা জামাল ভূঁইয়ার আচরণ ছাড়াও বাফুফে সভাপতির রেফারিদের নিয়ে করা মন্তব্যের ব্যাপারেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক, রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান, হেড অফ রেফারিজ সভাপতির বক্তব্যের ব্যাপারে তাদেরকে ব্যাখ্যা দেন। সেই ব্যাখ্যা অবশ্য রেফারিরা সন্তোষ হতে পারেননি। 

রেফারিরা তাদের অবস্থানে অনড় থাকায় এক পর্যায়ে সাধারণ সম্পাদক বিদেশি রেফারি আনতে রেফারিরা ফেডারেশনকে বাধ্য করছে বলেও মন্তব্য করেন বলে জানা গেছে। তখন রেফারিরা তাদের বকেয়া পরিশোধ করার দাবি জানিয়ে বিদেশি রেফারি আনার ব্যাপারে স্বাগত জানায়। 

মুন্সিগঞ্জে শেখ রাসেল ও সাইফ স্পোর্টিং ম্যাচ হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। রেফারিদের দাবি তারা আকস্মিকভাবে হার্ড লাইনে যাননি। বাফুফেকে বিষয়টি কয়েকবার অবহিত করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এই অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বাফুফের দাবি, ডিসিপ্লিনারি কমিটি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করায় অধিকতর তদন্ত হচ্ছে। জামাল নিজেকে সমর্থন করতে গিয়ে এক পর্যায়ে রেফারিকে মিথ্যে বলেছেন৷ রেফারিজ রিপোর্টের ভিত্তিতে ডিসিপ্লিনারি কমিটি সব সময় সিদ্ধান্ত দিলেও এবার ভিডিও ফুটেজ স্পষ্ট না হওয়ায় এবং রেফারি কার্ড না দেখানোয় কমিটির পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব হয়নি। 

জামাল ভূঁইয়ার চেয়েও কঠিন মন্তব্য করেছেন বাফুফে সভাপতি। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ ব্যক্তি বিধায় সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া রেফারিরা দেখাতে পারছে না। রেফারিরা ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম’ -এর মতো জামাল ভূঁইয়ার তদন্তাধীন বিষয়ে শক্ত অবস্থানে। 

রেফারিং বিষয়ে বাফুফে তেমন সচেতন নয়। সম্মানি, বকেয়ার বিষয় তো আছেই, সাম্প্রতিক সময়ে মাঠের বাইরের বিষয়গুলে বাফুফে ভালোমতো সমন্বয় করতে পারছে না, যার ফলে ম্যাচের ২৬ ঘন্টা আগে রেফারিরা ঠিক করা নিয়ে আবার আলোচনায় বসতে হচ্ছে। আগামীকাল রাজশাহীতে জামালদের ম্যাচ শীর্ষ রেফারিরাই করবেন নাকি নিচের স্তরের রেফারিরা সেটা দেখার বিষয়। 

এজেড/এটি