বাংলাদেশের গাড়ি চালকে মুগ্ধ পোলিশ রেফারি
গোটা বিশ্ব জুড়ে আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় পোল্যান্ডও। ইউক্রেনের অধিকাংশ নাগরিক ও ইউক্রেনে বসবাসরত অনেক দেশের নাগরিক পার্শ্ববর্তী দেশ পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশের অনেক নাগরিকও ইউক্রেন থেকে এখন পোল্যান্ডে অবস্থান করছেন। পোল্যান্ডের ওয়াশ’র বাংলাদেশ দূতাবাস এই সংকট নিয়ে খুবই ব্যস্ত। এমন কঠিন সময়েও বাংলাদেশের ভিসা দেয়ায় পোল্যান্ড নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন পোল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে রেফারিং করতে আসা আরতুর স্ট্যাচুরা, ‘আমি প্রয়োজনীয় সময়ের বেশ আগেই ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম। পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে অনেক ব্যস্ত। ফলে ভিসা কার্যক্রম অনেক দেরি হচ্ছিল। টুর্নামেন্টের সময় ঘনিয়ে আসায় আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করি। প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন আমি খেলোয়াড়, বাংলাদেশে খেলতে যাব। পরে বুঝতে পেরেছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে রেফারিং করতে যাব। রাষ্ট্রদূত আমার ভিসা দ্রুত অনুমোদন দেন তাই আমি এখন ঢাকায় বাঁশি বাজাতে পারছি।’
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন থেকে কয়েক লাখ লোক পোল্যান্ডে গিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এত সংখ্যক লোকের প্রবেশ অন্য দেশে ঘটেনি। নিজেদের উপর চাপ হলেও মানবতাকে উপরে রাখছেন পোলিশরা, ‘এক মিলিয়ন বা এর কম-বেশি লোক পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছে। অনেকে বাসায় নিজেদের রুমে ইউক্রেনিয়ানদের জায়গা দিয়েছে। অনেকে নিজেদের কয়েকটি রুমের মধ্যে কিছু রুমও ইউক্রেনের জন্য ছেড়েও দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের পর সেখানে থাকছে অনেকে।’-বলেন স্ট্যাচুরা।
যুদ্ধ এখনো চলমান। সংকট কবে কাটবে নিশ্চয়তা নেই তবে পোল্যান্ড ১৮ মাসের জন্য ইউক্রেনের নাগরিককে নিশ্চয়তা দিয়েছে বলে জানালেন এই রেফারি, ‘ইউক্রেন থেকে আসা নাগরিকরা ট্রেন, বাসে পোলিশ নাগরিকদের মতো চলাচল করছে। তাদের বাচ্চারাও পড়াশোনা, চিকিৎসার সুযোগ পাবে। সরকার আপাতত ১৮ মাসের জন্য করেছে এটি। সংকট দীর্ঘ হলে এটি আরো দীর্ঘ হতে পারে।’ সংকটকালীন সময়ে ইউক্রেনের পাশে স্ট্যাচুরা রয়েছেন মানসিকভাবে, ‘আমরা যুদ্ধের বিপক্ষে ও মানবতার পক্ষে। রাশিয়া যেটা করেছে সেটা মানবতার বিরুদ্ধে। আমরা ইউক্রেনের পক্ষে রয়েছি ও থাকব।’
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা এই সংকট ও পরিস্থিতি তৈরির জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোর দিকে ঝুঁকে যাওয়া, আমেরিকা-ইইউ’র মোড়লগিরিকেও কারণ হিসেবে দেখছেন। তবে পোলিশ ফুটবল রেফারি এই বিষয় বিশ্লেষণে যেতে চান না, ‘আমি আন্তর্জাতিক রাজনীতি অত বুঝি না। খেলাধুলার মানুষ; আমি খেলা ও মানবতার পক্ষে।’
পোল্যান্ডের ক্র্যাকো শহরে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস এই রেফারির। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ফুটবলে রেফারিংয়ের পাশাপাশি তিনি প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ করেন। আম্পুটি রেফারিং করতে রাশিয়াতেও গিয়েছিলেন তিনি। তবে এশিয়ায় কখনো আসা হয়নি তার। বাংলাদেশে এসেছেন তিন দিন।
পশ্চিমা ও উন্নত দেশের লোকজন বাংলাদেশে আসলে ট্র্যাফিক জ্যামে বিরক্ত হন। তবে তিনি জ্যাম থেকে নতুন এক উপলব্ধি করেছেন, ‘বাংলাদেশের গাড়ি চালকরা অসাধারণ। তারা এত জ্যাম ও আঁকাবাঁকা সরু রাস্তার মধ্যে দারুণ গাড়ি চালায়। তাদের প্রশংসা করতেই হবে। আমি বাংলাদেশের গাড়ি চালকদের উপর আসলেই মুগ্ধ।’
বাংলাদেশের গাড়ি চালকদের পাশাপাশি কমলাপুরের টার্ফেও মুগ্ধ হয়েছেন এই পোলিশ, ‘খেলার আগের দিন রাতেও আমি চিন্তায় ছিলাম মাঠ নিয়ে। বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো এই আয়োজন করছে। মাঠে প্রবেশ করে স্বস্তি পেলাম। খুব সুন্দর পরিবেশ দেখে আমি খুব খুশি।’
আম্পুচি বিশ্বকাপের পূর্ব এশিয়ার বাছাই চলছে ঢাকায়। চার দলের বাছাই থেকে দুই দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। ঢাকায় চার দলের বাছাই শেষ হবে আগামীকাল সোমবার। ১৫ মার্চ স্ট্যাচুরা বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। এই পোলিশ রেফারির এক পায়ের ফুটবলের বিশ্বকাপে বাঁশি বাজানোরও অভিজ্ঞতা আছে।
এজেড/এটি/এনইউ