চলতি মৌসুমে কারিম বেনজেমা যেন রূপকথার মাইডাস; যা ছুঁচ্ছেন, রীতিমতো সোনা হয়ে যাচ্ছে তা-ই। মেসি, নেইমার, এমবাপের পিএসজির বিপক্ষে ২২ মিনিটের ঝড়ে হ্যাটট্রিকের স্মৃতিতে ধুলো পড়েনি এখনো, তার আগেই চেলসির মাঠে করে বসলেন আরও এক হ্যাটট্রিক। তাতে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারের দুয়ারে চলে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। 

শেষ আটের লড়াইয়ের আগে রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে বাজি ধরার লোক একটু কমই ছিল। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ তো বটেই, চেলসির বিপক্ষে মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় যে রিয়ালের জয় ছিল না একটিও! তার ওপর যোগ করুন শেষ মৌসুমে সেমিফাইনালের হারটাকে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা রিয়ালের জন্য একটু প্রতিকূল ছিল বৈকি!

তবে যে দলে এমন আগুনে ফর্মে থাকা বেনজেমা আছেন, সেই দলের ভাবনা কীসে? উলটো বাড়তি ভাবনা তো প্রতিপক্ষেরই হওয়ার কথা! সেই কারণেই হয়তো, চেলসি কোচ থমাস টুখেল দলে নামিয়ে দিয়েছিলেন ৫ ডিফেন্ডার। রক্ষণের মাঝ অংশে ছিলেন থিয়াগো সিলভা, অ্যান্টোনিও রুডিগার আর আন্দ্রেস ক্রিশ্চিয়ানসেন। দুই উইংব্যাক হিসেবে রেখেছিলেন রিস জেমস আর চেজার অ্যাজপিলিকুয়েতাকে। 

তবে এতো যোগাড়যন্ত্র করেও লাভ হয়নি। বেনজেমার গোল পেতে লেগেছে মাত্র ২১ মিনিট। লড়াইয়ের আরও ১৫৯ মিনিট বাকি ছিল, একটা গোল হজম করে ফেরার মহাকাব্য রচনার ইতিহাস আছে ভুরিভুরি। তখনো চেলসির দমে যাওয়ার কোনো কারণই ছিল না। তবে কারণটা তৈরি হলো এর মিনিট তিনেক পর। বেনজেমা যখন করলেন দ্বিতীয় গোলটা; চেলসির মনোবল তখন ভেঙে চৌচির। 

কাই হ্যাভার্টজের কল্যাণে বিরতির আগে একটা গোল শোধ করে ব্লুজরা একটা প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। তবে বিরতির পরেই চেলসির সে আশায় পানি ঢালেন বেনজেমা। চেলসি গোলরক্ষক এদুয়ার্দ মেন্দির ভুলের সুযোগ নিয়ে ফরাসি স্ট্রাইকার করে বসেন গোল। তাতে লুইজ আদ্রিয়ানো (২০১৪-১৫), লিওনেল মেসি (২০১৬-১৭) ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর (২০১৬-১৭) পর ইতিহাসে মাত্র চতুর্থবারের মতো টানা দুই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন বেনজেমা। 

তবে এর আগ পর্যন্ত চেলসি খারাপ খেলেনি মোটেও। কোর্তোয়াকে গোটাচারেক সেভ দিতে হয়েছে, তাই গোলের সংখ্যাটা একের বেশি হয়নি। চেলসি দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও চেষ্টা করেছে শেষতক। হ্যাভার্টজকে তুলে দ্বিতীয়ার্ধে কোচ টুখেল নামান রোমেলু লুকাকুকে। তবে সফলতার মুখ দেখেনি দকটি। তাতে রিয়ালের বিপক্ষে ৫১ বছর ধরে না হারার দম্ভটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, রিয়াল ৩-১ গোলের দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে শেষ চারের পথে এগিয়ে গেল রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা। 

ফিরতি লেগে আগামী বুধবার মাঠে নামবে দুই ইউরোপীয় জায়ান্ট। শেষ চারের টিকিট কাটতে হলে দলটিকে সেদিন করতে হবে অন্তত দুই গোল। তবে দলের ফরোয়ারদের যা ফর্ম, তাতে লড়াইটা মোটেও সহজ হওয়ার কথা না চেলসির।

এনইউ/ওএফ