৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় লেগ। লকডাউন পরিস্থিতির জন্য খেলা শুরু করতে পারছে না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ১৪ মে থেকে বসুন্ধরা কিংসের এএফসি কাপের ম্যাচ আবার জুনে জাতীয় দলের বিশ্বকাপ বাছাই। লকডাউন উঠে গেলে মেতেই লিগের দ্বিতীয় লেগ শুরু নাকি জুনের পর এ নিয়ে ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশ্র মতামত। 

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র লকডাউন উঠে যাওয়ার পরপরই খেলার পক্ষে।

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাহাঙ্গীর এজাজ বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট করে ক্লাব চালাচ্ছি। প্রতিটি দিনই আমাদের কষ্টে যাচ্ছে। লিগ দ্রুত শেষ হলে আমরা রক্ষা পাই।’ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ পাতানো ম্যাচের অভিযোগের উপর তাদের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে। বাইরের সাহায্য নেয়ার পরিবর্তে এলাকার ব্যক্তিরাই ক্লাব চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান এজাজ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাস পার হলেই বিদেশি ফুটবলারদের বেতন দিতে হচ্ছে । এছাড়া ক্যাম্প চালানোতে খরচ রয়েছে। সরকারের সাথে আলোচনা করে দর্শকশূন্য গ্যালারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে খেলা শুরু করা শ্রেয়।’ 

খেলা শুরু করতে বিলম্ব হলে এখানেই লিগের সমাপ্তি টানার পরামর্শ মুক্তিযোদ্ধা ম্যানেজারের। আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স ইউনিয়ন অনুশীলন বন্ধ রেখেছে। অন্য দিকে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে আবাহনী, কিংস, শেখ জামাল সহ আরো কয়েকটি ক্লাব। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু লকডাউন উঠার এক সপ্তাহ’র মধ্যেই খেলার পক্ষে, ‘ফেডারেশনের বর্তমান যে অবস্থান লকডাউন শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে খেলা। আমরা এর সাথে একমত। জুনে জাতীয় দলের ম্যাচের আগে যদি ৪-৫টি খেলা খেলা যায়। তাহলে তো অনেকটা এগিয়ে থাকতে পারছি আমরা।’  

ব্রাদার্স ইউনিয়নের অন্যতম পরিচালক আমের খান অবশ্য জুনের পর একটানা খেলার পক্ষে, ‘লকডাউন কত দিন যাবে এখনো অনিশ্চিত। মে’তে আবাহনী ও কিংসের খেলা রয়েছে। এরপর আবার জাতীয় দলের। এর মধ্যে লিগ শুরু করলেও জাতীয় দলের জন্য তখন বিরতি দিতেই হবে। এর চেয়ে জুনেই শুরু করা শ্রেয়। তখন টানা খেলা হয়ে শেষ করা যাবে।’ 

ব্রাদার্সের সঙ্গে অনেকটাই একমত মোহামেডানের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, ‘আমাদের ক্লাবের অনুশীলন চললেও অনেক ক্লাব বন্ধ করেছে। ক্যাম্প বন্ধ করার পর ফুটবলারদের ফিটনেস ফিরে পেতে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে লিগ খেলার জন্য’। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিরউদ্দিন চৌধুরি অবশ্য মাঝামাঝি অবস্থানে,‘ আমরা চাই লিগটি খুব দ্রুত শেষ হোক। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে এবার লিগ হচ্ছে। বিলম্বিত না করে যে প্রক্রিয়ায় বা মাধ্যমে দ্রুত শেষ হবে আমরা সেটারই পক্ষে।’ 

ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু বলেন, ‘আমরা এখন এএফসি কাপের প্লে অফ নিয়ে বেশি চিন্তিত। আমাদের ম্যাচটি কখন কোথায় হবে এর উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে’। বসুন্ধরা কিংসও এএফসি কাপের মূল পর্ব নিয়ে ভাবছে। ১৪ মে চূড়ান্ত পর্ব। এর এক সপ্তাহ আগেই মালদ্বীপে যেতে চায় কিংস। আবাহনী ও কিংসকে ছাড়াই মে’র মধ্যে খেলতে চান সাইফ স্পোর্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ‘সারা বিশ্ব এভাবেই চলে প্রতি লিগের দুই-তিনটি ক্লাব মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলে বাকি ক্লাবগুলো ঘরোয়া প্রতিযোগিতা চালিয়ে যায়। এখানেও এমন হওয়া প্রয়োজন।’ তবে আমের খান অবশ্য খানিকটা বিপত্তি দেখছেন এতে, ‘আবাহনী চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারলে এক রকম না উঠতে পারলে আরেক রকম। আবাহনী যদি এএফসি কাপের মূল পর্বে না খেলতে পারে তখন কি তারা কিংসকে ছাড়া লিগ খেলতে চাইবে।’ 

প্রতিটি ক্লাবেরই নিজস্ব মতামতের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে। আগামীকাল সকাল সাড়ে এগারোটায় ভার্চুয়াল লিগ কমিটির সভায় ক্লাবগুলোর প্রতিনিধি তাদের অবস্থান ব্যক্ত করবেন। আন্তর্জাতিক সূচি, ক্লাবগুলোর অবস্থা ও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করেই লিগ কমিটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। লিগ কমিটির সভা থেকে আমের খান স্পষ্ট ঘোষণা প্রত্যাশ করছেন, ‘ফেডারেশন যদি ঘোষণা দেয় জুনে লিগ শুরু তখন আমরা বিদেশিদের সাথে একটা সমঝোতায় আসতে পারব। খেলা কবে হবে কি হবে না বলে শুধু বুঝিয়ে রাখলে উভয় সংকট।’

এজেড/এটি