চেষ্টার শুরু সেই ২০১৮ সালে। এরপর নানা জটিলতায় কোথায় যেন আটকে যাচ্ছিল। অবশেষে সে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। প্রথম বাংলাদেশি ফ্যানক্লাব বার্সেলোনার স্বীকৃতি পেল ‘পেনইয়া ব্লাউগ্রানা বাংলাবার্সা দে ঢাকা’। 

এ দফায় আনুষ্ঠানিক দৌড়ঝাঁপ ২০১৮ থেকে শুরু হলেও এর কুশীলবরা এমন কিছুর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন আরও এক দশক আগে, জানান বাংলাবার্সার নির্বাহী কমিটির সদস্য মুদাসসির আরাফাত। তার ভাষ্য, ‘পেনইয়া ব্লাউগ্রানা বাংলাবার্সা দে ঢাকা প্রায় এক দশক দীর্ঘ একটা স্বপ্ন, একটা সংগ্রাম, যার শুরুটা হয়েছিল এফসি বার্সেলোনা লাভার্স ক্লাব নামে একটা ফেসবুক গ্রুপের গণ্ডিতে। গ্রুপটার শুরু হয়েছিল দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব 'কিউল' বা বার্সাভক্তদের এক ছাতার নিচে আনার লক্ষ্য নিয়ে।’

সদ্যসমাপ্ত প্রক্রিয়ার শুরু আড়াই বছর আগে হলেও এর আগে কম চেষ্টা করা হয়নি একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য। ২০১২ সালে এই ‘পেনইয়া’র ধারণা মাথায় আসার পর থেকে এর স্বপ্নদ্রষ্টারা নানাভাবে আবেদন করেছেন বার্সেলোনার স্বীকৃতি পেতে। কিন্তু কাতালান ক্লাবটির জটিল প্রক্রিয়া ও নানাবিধ জটিলতায় শেষমেশ আর আলোর মুখ দেখেনি সেসব চেষ্টা। 

স্বপ্নদ্রষ্টারা সে সময় দুলেছেন আশা-নিরাশার দোলাচলে। শেষমেশ ২০১৮ সালে আরও একবার মুদাসসির আরাফাত, মাসুদুল লাবিব, কামরুল হাসান, রাশিক ইসলাম, এরফান আলী চৌধুরী, সোয়েলেম আফনান ইহাম, রাতুল কবির, রিফাত আজিম সৌরভ, কাজি মাহবুব মুতাকাব্বিরসহ গ্রুপের বেশ কয়েকজন প্রধান সদস্য মিলে চেষ্টা চালান ক্লাবকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এনে দেওয়ার। শুরু হয় দেশের ও বার্সেলোনার অনেক কূটনৈতিক দপ্তরে ঘোরার এক ক্লান্তিকর যাত্রার। 

তারপর থেকে এ পর্যন্ত কেটে গেছে প্রায় আড়াই বছর। এত সময় লেগেছে কেবল স্বীকৃতি প্রদানে বার্সেলোনার কঠিন সব নিয়মের বেড়াজালে আটকে। একটা 'পেনইয়া' কে স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে কাতালান ক্লাবটির কঠোর সব নির্দেশিকা তো আছেই, এরপর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া যেন তার চেয়েও জটিল৷ যেসব প্রক্রিয়া পেরোতে প্রতিবারই কোথাও না কোথাও ত্রুটি-বিচ্যুতি যেন থেকেই যাচ্ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে, ক্লাবটির বর্তমান লোগো আর নামে বার্সেলোনায় অনুমোদন পেতেই কেটে গিয়েছিল প্রায় এক মাসেরও বেশি সময়৷ 

এরপর কাতালুনিয়ায় স্বাধীনতা আন্দোলন চলেছে, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির আঘাত এসেছে, হয়েছে বার্সেলোনায় সভাপতির পদত্যাগ, নতুন নির্বাচনও। এ সবের সম্মিলিত ফলাফল হিসেবেই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছিল পাল্লা দিয়ে। 

অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষা, ক্লান্তিকর এক যাত্রা শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই। বিশ্বজুড়ে ১৯টি ‘পেনইয়া’কে এফসিবি ওয়ার্ল্ড পেনইয়েস ফেডারেশনের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় সেদিন। আর তাতেই ইতিহাস গড়ে বাংলাবার্সা, প্রথম বাংলাদেশি ফ্যানক্লাব হিসেবে বার্সেলোনার পক্ষ থেকে স্বীকৃতি পেয়ে। 

দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে এ স্বীকৃতির পর উচ্ছ্বসিত ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই। নির্বাহী কমিটির সদস্য মুদাসসির আরাফাত বলেন,  ‘বাংলাদেশের প্রথম বার্সেলোনার পেনইয়া হতে পেরে আমরা যারপরনাই আনন্দিত। আর এ আনন্দ শুধু আমাদের ভেতরই আটকে নেই, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বার্সেলোনা কমিউনিটিতেই। এ উচ্ছ্বাসই প্রমাণ, এর মূল্য বাংলাদেশের বার্সেলোনা কমিউনিটিতে কত বেশি!

১৮৯৯ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকেই ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা মূল্যবোধ আর সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নিজেদের ‘মোর দ্যান আ ক্লাব’ বলে থাকে। পেনইয়া ব্লাউগ্রানা বাংলাবার্সা দে ঢাকার উদ্দেশ্যও সেই মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে ফুটবলের মাধ্যমে সমাজ গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখা।

এনইউ/এমএইচ