সালাউদ্দিন-চুন্নুর স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/ফাইল ছবি
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো দিন ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের সপরিবারে হত্যা করেছিলেন দুর্বৃত্তরা। বঙ্গবন্ধু নিজে ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী এবং তার পরিবারও ছিল ক্রীড়া ঘনিষ্ঠ। সেই সময় ফুটবল ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ফুটবলারদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ছিল সুন্দর সম্পর্ক।
মালয়েশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট মারদেকা কাপ। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল সেই টুর্নামেন্টে প্রথম খেলতে যায়। সেটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ। ওই সময় ফিফা-এএফসি’র প্রীতি ম্যাচ তেমন হতো না। ১৯৭৩ সালের পর আবার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ আসে বাংলাদেশের মারদেকা কাপের মাধ্যমেই। ১৯৭৫ সালে মারদেকা কাপ খেলতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশ ফুটবল দল।
বিজ্ঞাপন
সেই ফুটবল দল দেশ ছাড়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। সেই দিনের স্মৃতি এখনো বেশ জ্বলজ্বলে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে, ‘আমি ছিলাম সেই দলের অধিনায়ক। বঙ্গবন্ধু পুরো দলকে অনেক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছিল ভালো খেলার। পুরো দলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ফটোসেশন করেছিল। সেই ছবি জাদুঘরেও আছে।’
সেই দলের অন্যতম কনিষ্ঠ ফুটবলার ছিলেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল এক নাম। সেই চুন্নু এখনো ওই দিনকে নিজের জীবনের সেরা দিন হিসেবে মনে করেন, ‘কামাল ভাইয়ের সাথে প্রায় দুই বছর বেশ ঘনিষ্টভাবে মিশলেও বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে সেটিই ছিল প্রথম সুযোগ। আমি খুব ছোট ছিলাম বিধায় বঙ্গবন্ধু তার সামনেই আমাকে বসতে বলেছিলেন। সেই দিনটি এবং বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো এখনো কানে বাজে।’
চুন্নুর সমসাময়িক আরেক তারকা ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলুরও জাতীয় দলে অভিষেক ১৯৭৫ সালের মারদেকা দিয়েই। তিনিও চার দশক পর সেই দিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আপ্লুত, ‘ওই দিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছি ও হ্যান্ডশেকও করেছিলাম।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে পর দিন মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন ফুটবলাররা। মারদেকা কাপের কয়েকটি ম্যাচ খেলেও ফেলেন। শেষ ম্যাচটি ছিল ১৫ আগস্ট। ওই দিন ঘটে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নারকীয় ঘটনা।
বিজ্ঞাপন
কুয়ালালামপুরে সেই সকালের দিনটি বর্ণনা করলেন সালাউদ্দিন এভাবে, ‘আমাদের খেলা দেখতে শেখ কামালের আসার কথা ছিল পরে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিল এটা তান্না (সাবেক ক্রিকেটার ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার) জানত না। ওই দিন সকালে আমি ও তান্না নাস্তা করছিলাম। তান্না হংকং থেকে মালয়েশিয়া এসেছিল। এক শিখ ভদ্রলোক জানালেন আমাদের বঙ্গবন্ধু আর নেই! ওই সময় তো আর ইন্টারনেট, মোবাইল এত কিছু নেই। তিনি বিস্তারিত বলতে পারলেন না। দ্রুত নাস্তা শেষ করে একটি গাড়ী নিয়ে ছুটেছিলাম কুয়ালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসে। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। আমাদের কথা শুনে রাষ্ট্রদূত এসে মাথায় হাত বুলালেন চোখে মুখে কান্নার ছাপ। তখন বুঝলাম বিষয়টি সত্যি। আস্তে আস্তে খবর পেলাম বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল সহ আরো অনেকে নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর চেয়ে বাজে দিন আর কখনো আসবে না।’
ওই দিন বাংলাদেশের ম্যাচ ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে। বাংলাদেশ ওই ম্যাচ খেলতে চায়নি। সেই দিনের ম্যাচ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলদাতা আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘আমরা সবারই মন খারাপ। সেই দলে আবাহনীর অনেক ফুটবলার ছিল। সবার সাথেই কামাল ভাইয়ের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। সবাই কান্না করছিল। এই অবস্থায় আমরা কোনোভাবেই খেলতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত আয়োজকদের অনুরোধে খেলতে হয়েছে। আমাদের সেই ম্যাচে একদম মন ছিল না। আমরা সবার মনে মনে তাড়া করছিল কখন খেলা শেষ কখন দেশে ফিরব। এর চেয়ে বাজে দিন জীবনে আর আসেনি আমাদের।’
এজেড/এটি