প্রতিপক্ষের মাঠ শেষ কয়েক মৌসুম ধরেই বার্সেলোনাকে কঠিন সময়ই উপহার দেয়। চলতি মৌসুমে সে সমস্যাটা আরও প্রকট হয়েই উঠেছিল যেন। লা লিগায় ৫ ম্যাচ খেলে ফেললেও জিততে পারেনি একটি ম্যাচে। ষষ্ঠ ম্যাচে এসেও সে ‘অ্যাওয়ে জুজু’ তে কাবু হওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল বার্সা। তবে শেষ সময়ের দুই গোলে সে শঙ্কা কাটিয়েছে দলটি। ভিয়ারিয়ালের ঘর এল মাদ্রিগালে তুলে নিয়েছে ৩-১ গোলের এক জয়।

লিওনেল মেসি চলে যাওয়ার পর থেকে বার্সেলোনার বড় সমস্যা ফিনিশিংয়ে। মাঝমাঠ থেকে দারুণ সব সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বটে, কিন্তু সেসব সুযোগ কাজে লাগাবেন কে? মেসি নেই, আরও দুই ভরসা আনসুমানে ফাতি, উসমান দেম্বেলেরাও চোট নিয়ে আছেন আসা যাওয়ার মাঝে। দুয়ের মিশেলেই এই সমস্যা কাতালানদের।

ভিয়ারিয়ালের মাঠেও বার্সেলোনা সৃষ্টি করল দারুণ কিছু সুযোগ। প্রথমটা আসে তৃতীয় মিনিটে। বার্সেলোনার তরুণ উইঙ্গার এজ আবদের দারুণ এক হেডার কোনোক্রমে ঠেকান ভিয়ারিয়ালের আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক জেরোনিমো রুলি। নাহয় প্রথম গোলটা ম্যাচের শুরুতেই পেয়ে যেত বার্সা।

পরের দুটো সুযোগ যে গোলে রূপ পায়নি, তার দায়টা অবশ্য বার্সার নিজেরই। ৮ ও ১০ মিনিটে গোলমুখে গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে দলকে হতাশ করেন মেমফিস ডিপাই ও পাবলো পায়েজ গাভি। মেমফিসের অবশ্য সেটাই শেষ মিস ছিল না, ১৮ মিনিটে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়েও গোলের দেখা পাননি তিনি।

সময় যত গড়াচ্ছিল কোচ উনাই এমেরির ভিয়ারিয়াল শুরুর ঝাপটা সামলে ধীরে ধীরে নিজেদের মেলে ধরছিল যেন। ৩২ মিনিটে ফাঁকা জাল পেয়েও পাও তরেস মিসটা না করলে পরম আরাধ্য গোলটাও এসে যেত দলটির। কিন্তু স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের হেডারটা বেরিয়ে গেছে লক্ষ্যের বাইরে দিয়ে, ফলে সে যাত্রাতে হতাশই হতে হয় দলটিকে।

আত্মবিশ্বাসী শুরুর পর খেই হারিয়ে বসা বার্সা প্রথমার্ধে আরও একবার গোল হজমের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল। ৩৯ মিনিটে আর্নাউ দানজুমার শটটা ঠেকিয়ে দলকে সে যাত্রায় রক্ষা করেন দলটির জার্মান গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন। 

প্রথমার্ধের শুরুটা যেমন আত্মবিশ্বাসি করেছিল বার্সা, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও হলো তেমন। তবে প্রথমার্ধের সঙ্গে দ্বিতীয়ার্ধের পার্থক্য হলো গোলে। বিরতির পর শুরুতেই গোল পেয়ে যায় কাতালানরা। 

নতুন কোচ জাভির অধীনে জর্দি আলবার রক্ষণাত্মক দায়িত্ব খানিকটা কমে গেছে। লেফটব্যাক থেকে এখন তিনি খেলছেন লেফট উইংব্যাক ভূমিকায়, তাই বক্সে তার উপস্থিতিও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। তার এক নিচু ক্রসই বার্সাকে এনে দিল প্রথম গোলটা। তার ক্রসে মেমফিসের আলতো টোকা ঠেকিয়ে দেন রুলি, তবে আয়ত্বে রাখতে পারেননি। পেছনে অরক্ষিত অবস্থায় থাকা ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং সহজেই বলটা জড়িয়ে দেন জালে, তাতেই বার্সা পায় প্রথম গোলটা।

গোলের পরই যেন মনোযোগ নড়ে গিয়েছিল বার্সার। ৬৪ মিনিটে কপাল জোরে পেনাল্টি হজম করেনি। ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় রাউল অ্যালবিওলকে টেনে ফেলে দিয়েছিলেন। তাতে পেনাল্টির জোরালো আবেদন করে ভিয়ারিয়াল। রেফারি তাতে তো সাড়া দেনইনি, ভিএআরেও পাঠাননি সিদ্ধান্তটা। 

বার্সার তথৈবচ ডিফেন্ডিংয়ের ফল হিসেবে আসে ৭৬ মিনিটে স্বাগতিকদের গোল। নিজেদের থ্রো ইন থেকে বল হারায় কাতালানরা। নাইজেরিয়ান উইঙ্গার স্যামুয়েল চুকওয়েজি দারুণ দক্ষতায় সার্জিও বুসকেটস আর জেরার্ড পিকেকে কাটিয়ে বলটা জড়িয়ে দেন বার্সার জালে।

সমতায় ফিরে তিন পয়েন্টের জন্য লড়তে থাকে ইয়েলো সাবমেরিনরা। তবে গোলের দেখা অবশ্য পায়নি। উল্টো ভুলের খেসারত দিয়ে ৮৮ মিনিটে হজম করে বসে গোল। টের স্টেগেনের লং বল ক্লিয়ার করে নিজেদের গোলরক্ষককে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পারভিস এস্তুপিনিয়ান, কিন্তু দুর্বল সে হেডটা গিয়ে পড়ে মেমফিসের পায়ে। সেখান থেকে গোলরক্ষককে একা পেয়ে ডাচ ফরোয়ার্ড করেন গোলটা।

শেষ সময়ে ফেলিপে কৌতিনিয়ো প্রতিপক্ষ বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় বার্সা। সেখান থেকে গোল করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তাতেই ৩-১ গোলের জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বার্সার।

চলতি মৌসুমে এই প্রথম লা লিগায় টানা দুই ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেল দলটি। এর আগে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিওলের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় পেয়েছিল বার্সা। চলতি লিগে ১৪ ম্যাচ শেষে এটি বার্সার ষষ্ঠ জয়। বাকি আট ম্যাচের ৫টিতে করেছে ড্র, হেরেছে তিনটিতে। তাতে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার সাত নম্বর অবস্থানে আছে দলটি। এক ম্যাচ কম খেলে বার্সা থেকে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে লা লিগার শীর্ষে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। ১ ও ২ পয়েন্ট কম নিয়ে রিয়াল সোসিয়েদাদ ও সেভিয়া আছে তালিকার দুই ও তিনে। চারে থাকা অ্যাটলেটিকোর সংগ্রহ ২৬ পয়েন্ট।

এনইউ