‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা/ ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ/ আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’- রবি ঠাকুরের পঙক্তিগুলো যেন বর্তমান বার্সেলোনার ক্ষেত্রে মিলে যায় শতভাগ। মৌসুমের শুরুতে রথী-মহারথীদের বিদায়, এরপর চোটজর্জর স্কোয়াড নিয়ে দলটা আছে বড় বিপদেই। এমন অবস্থায় কোচ জাভি হার্নান্দেজ বড় আশা নিয়ে হাত বাড়াচ্ছেন তরুণদের দিকে। সেই তরুণরা এবার আশাহত করলেন না কোচকে। তারুণ্যে ভর করেই এলচেকে ৩-২ গোলের থ্রিলারে হারিয়ে জয়ে ফিরেছে বার্সা।

শেষ কিছুদিনে যেমন হচ্ছে দলটার সঙ্গে, দারুণ শুরুর পর দ্বিতীয়ার্ধে ঝড়ের কবলে পড়ে পথহারা হয়ে পড়া। সেই শঙ্কা শনিবার রাতেও জেগে উঠেছিল ন্যু ক্যাম্পে। তাতে টানা পাঁচ ম্যাচ জয়হীনতার চোখরাঙানিও বাড়ছিল দলে। তারুণ্যে ভর করেই সেই শঙ্কাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে কাতালানরা।

কোচ জাভি এদিন দলের আক্রমণভাগ সাজিয়েছিলেন গতিকে প্রাধান্য দিয়ে। দুই উইংয়ে উসমান দেম্বেলে ও এজাজুলি আবদে ছিলেন, তাদের সামনে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে আরেক তরুণ ফেরান ইয়ুতলা। রক্ষণে জেরার্ড পিকে খেলতে পারেননি নিষেধাজ্ঞার কারণে, ফলে এরিক গার্সিয়া শুরুর একাদশে জায়গা ফিরে পেয়েছিলেন এদিন। 

মাঝমাঠের দখল আর গতিশীল আক্রমণ নিয়ে বার্সেলোনা ম্যাচটা শুরু করেছিল দারুণভাবেই। মাত্র দ্বিতীয় মিনিটেই বল জড়িয়েছিল এলচের জালে। তবে ইয়ুতলার দারুণভাবে করা ফিনিশটা গোলের খাতায় ওঠেনি অফসাইডের কাটায় পড়ে। গোল না পেলেও বার্সেলোনার অভিপ্রায়টা পরিষ্কারই ছিল।

সেটা প্রথমার্ধে ধরেও রেখেছিল দলটি। মাঝমাঠে পাবলো পায়েজ গাভির সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া ছিল ইয়ুতলার। সঙ্গে জর্দি আলবা, দেম্বেলে, আবদেরা দুই উইং থেকে ডিফেন্ডার সরিয়ে নিয়ে গোলমুখে ফাঁকা জায়গা বানিয়ে দেওয়ার কাজটা করছিলেন ভালোভাবে। বার্সেলোনাও ফলটা পাচ্ছিল ভালোভাবে, এলচে রক্ষণ ভাঙছিল প্রতি ক্ষণেই।

বার্সার প্রথম গোলটা অবশ্য এসেছে সেটপিস থেকে। ১৬ মিনিটে উসমান দেম্বেলের নেওয়া কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে দলকে এগিয়ে দেন দ্বিতীয় মিনিটে গোলবঞ্চিত থাকা ইয়ুতলা। এর চার মিনিট পর গাভি নাম লেখান গোলের খাতায়। মাঝমাঠে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে ছিটকে দারুণ এক গোল করে বসেন ১৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। 

বিরতির আগে বার্সা আরও সুযোগ বানিয়েছে বটে, কিন্তু গোলের দেখা আর পায়নি দলটি। এ ‘ব্যর্থতার’ খেসারত দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় দিয়েই ফেলেছিল কাতালানরা। ৬২ আর ৬৩ মিনিটের দুই গোল হজমের পর মনেই হচ্ছিল, পুরনো রোগটা বুঝি ফিরেই আসছে কাতালুনিয়ায়! আরও একটা জয়হীন ম্যাচই বুঝি নিয়তি বার্সার!

তবে তা হয়নি দলটির যুব একাডেমি ‘লা মাসিয়ার’ আরও এক তরুণের কল্যাণে। ৮৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোলদাতা গাভির সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় গোল পান নিকো গঞ্জালেস। গাভি দারুণ এক কাটব্যাক করেন, ফাঁকায় থাকা নিকোকে খুঁজে পায় যা, দারুণ এক ফিনিশে এরপর নিকো দলকে এনে দেন রোমাঞ্চকর এক জয়। 

এর ফলে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পাঁচ ম্যাচ পর জয় পেল বার্সা। এই জয় দলটিকে তুলে দিয়েছে পয়েন্ট তালিকার সপ্তম স্থানে। ১৭ ম্যাচ শেষে ৭ জয়, ৬ ড্রয়ে দলটির অর্জন ২৭ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। বছরের শেষ ম্যাচে বার্সা খেলবে সেভিয়ার বিপক্ষে। আগামী বুধবার আন্দালুসিয়ানদের আতিথ্য নেবে জাভির শিষ্যরা।

এনইউ