ফ্রাঞ্চাইজ হকির আগে আম্পায়ারিং ‘সংকট’
বাংলাদেশের দুই আন্তর্জাতিক আম্পয়ার সেলিম লাকী (সর্ববামে ) ও শাহবাজ আলী (বা থেকে তৃতীয়) / ফাইল ছবি
আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে দেশের হকির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। প্রথমবারের মতো ফ্রাঞ্চাইজ হকি লিগ মাঠে গড়াবে। এই ঐতিহাসিক ক্ষণের আগে হকি অঙ্গনে বইছে অসন্তোষ। দেশের শীর্ষ আম্পায়াররা এই ফ্রাঞ্চাইজ লিগ পরিচালনা থেকে নিজেদের বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দেশের শীর্ষ আম্পায়াররা খেলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও ফেডারেশন বিকল্প আম্পায়ার দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
বিজ্ঞাপন
ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ বলেন, ‘আমরা ৩ জন বিদেশি আম্পায়ার এনেছি। এর সঙ্গে দেশি বেশ কয়েকজন রয়েছেন। আশা করি খেলা পরিচালনা সুষ্ঠভাবেই হবে’।
সেলিম লাকী, শাহবাজ আলীর মতো আন্তর্জাতিক আম্পায়ার যারা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন আম্পায়ারদের পরিবর্তে অন্য আম্পায়ারদের দিয়ে খেলা পরিচালিত হলে মান নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতেই পারে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন : পাক-ভারত ম্যাচে বাংলাদেশি আম্পায়ার
ফ্রাঞ্চাইজ লিগের জন্য তিন দেশ থেকে তিন আম্পায়ার উড়িয়ে এনেছে ফেডারেশন। এই তিন আম্পায়াররা ম্যাচ প্রতি সম্মানি পাবেন ১০০ ডলার করে, সেখানে দেশি আম্পায়ারদের জন্য সম্মানি মাত্র দেড় হাজার। দেশীয় আম্পায়ারদের দাবি ছিল তাদের সম্মানি বৃদ্ধি করার।
আন্তর্জাতিক আম্পায়ার শাহবাজ আলী বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো অংক বলিনি। তবে ফেডারেশনের কাছে অনুরোধ ছিল বিদেশিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটা সম্মানজক ফি দেওয়ার। পাশাপাশি আমাদের যেন হোটেলে রাখা হয় যাতে সুষ্ঠভাবে খেলা পরিচালনা করা যায়’।
হকি সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, তিন বিদেশি আম্পায়ারের চেয়ে বাংলাদেশি দুই আম্পায়ার সেলিম ও শাহবাজ বেশি মানসম্পন্ন।
আম্পারদের দৃষ্টিকোণ থেকে দাবিটির যৌক্তিকতা থাকলেও ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাদের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না, ‘অবশ্যই আম্পায়ার হকির বড় অংশ। তাই বলে টুর্নামেন্টের দুই দিন আগে বাঁশি বাজাব না বলে ফেডারেশনকে জিম্মি করাও যৌক্তিক নয়। আমরা বিকল্প আম্পায়ার দিয়ে খেলা পরিচালনা করব’। সাধারণ সম্পাদকের পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাজের বক্তব্য, ‘ ফ্রাঞ্চাইজ টুর্নামেন্টে লোগো, ড্রাফট সুন্দর অনুষ্ঠান হয়েছে। আমরা আমন্ত্রণ পাইনি। কারা বাঁশি বাজাবে সেটা ঠিক হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। ১৯ অক্টোবর ফেডারেশন আম্পায়ার্স বোর্ডকে চিঠি দিয়ে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নাম দিতে বলেছে। আম্পায়ার্স বোর্ড ২৩ অক্টোবর সভা করে ৮ জনের নাম দিয়েছিল। ২৬ অক্টোবর আমাকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফোন করলে দাবির কথা বলি। এর আগে বলার ক্ষেত্র ছিল না।’
গতকাল রাতে হকি ফেডারেশনের আম্পায়ার্স বোর্ড ভেঙে নতুন করে করা হয়েছে। আম্পায়ার্স বোর্ডের সদ্য বিদায়ী সেক্রেটারি কামরুল ইসলাম কিসমত এতে বিস্মিত, ‘ আম্পায়ার্স বোর্ড কেন ভেঙে দেওয়া হলো না বিষয়টি বুঝলাম না। আম্পায়াররা দাবি জানিয়েছে, জানানোর অধিকার রয়েছে। এই লিগ হচ্ছে এইস (টুর্নামেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী) এর অধীনে। সব কিছু তারাই করছে। এই লিগের জন্য আম্পায়ার্স বোর্ডর সেক্রেটারি হিসেবে আমি জানিয়েছি, ‘দাবি না মানলে খেলা চালাবে না’। এখানে বোর্ডের দায় কোথায়? কেন এবং কি প্রক্রিয়ায় বোর্ড ভাঙল স্পষ্ট নয়।’
ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আম্পায়ার্স বোর্ড ভাঙা-গড়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘গতকাল চার সহ-সভাপতির উপস্থিতিতে ফ্রাঞ্চাইজ লিগের জন্য সাজেদ আদেলকে চেয়ারম্যান এবং জাকি আহমেদ রিপনকে সেক্রেটারিকে আম্পায়ার্স বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিগত বোর্ড আম্পায়ারদের সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় গতকাল এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাব কমিটির পুনঃগঠন ও পরিবর্তন হতেই পারে।’
আম্পায়ার্স বোর্ডের নতুন দায়িত্ব প্রাপ্তরা আজ দেশের শীর্ষ আম্পায়ারদের ডেকেছিলেন। আজকের আলোচনায় আবার নিজেদের দাবি-দাওয়ার চেয়ে আম্পায়ার্স বোর্ড ভাঙাই মুখ্য অবস্থানে ছিল, ‘হকির স্বার্থে আমরা নিজেদের ফিট রেখে এক মাস প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ফ্রাঞ্চাইজিতে অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আমাদের দেশীয় আম্পায়ারদের সম্মানি ও সুযোগ বৃদ্ধির চাহিদা অমূলক নয়। এরপরও আমরা হকির বৃহত্তর স্বার্থে খেলা পরিচালনা করতে চেয়েছি আগের আম্পায়ার্স বোর্ডের অধীনে। তারা এতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। ফলে আমরাও বলেছি, খেলা পরিচালনা সম্ভব নয় ’ বলেন শাহবাজ।
বাংলাদেশের হকিতে দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। ফ্রাঞ্চাইজ ভিত্তিক সুন্দর একটি উদ্যোগের আগে আবার সেই দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। এগুলো কাটিয়ে মাঠে সুন্দর খেলার প্রত্যাশায় হকি প্রেমীরা।
এজেড/এসএম