হকি ম্যাচ মানেই গোলযোগ, প্রতিবাদ। আবাহনী-মোহামেডানের মধ্যকার ম্যাচে সে মাত্রা আরো বেশি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আজ (বুধবার) ম্যাচ হয়েছে নির্বিঘ্নে। ম্যাচের সময় ও শেষে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মোহামেডান ৪-০ গোলে আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপা রেসে টিকে রয়েছে। আবাহনী শিরোপা দৌড়ে অনেক পিছিয়ে পড়লেও তারা মাঠ ও মাঠের বাইরে মেজাজ হারায়নি। 

আবাহনী মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তিন ডাচ খেলোয়াড় উড়িয়ে এনেছেন। তিন জনকেই আজ খেলিয়েছে আবাহনীর কোচিং প্যানেল। তিন ডাচ খেলোয়াড় আবাহনীর হয়ে তেমন কিছুই করতে পারেনি। আবাহনীর খেলায় দলীয় সমন্বয় ও পরিকল্পনার অভাব ছিল অনেক। 

মোহামেডান ছিল এর সম্পূর্ণ বিপরীত। নির্দিষ্ট সময় গোল আদায় করে ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছে। শুধু গোলই নয়, মোহামেডানের দুই আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় ঝলক দিয়েছেন। দুই আর্জেন্টাইন ঝলকের পাশাপাশি ভারতীয় সুনিল বিদ্যাস্বামী নিজেকে বিশেষভাবে প্রমাণ করেছেন। 

৫ মিনিটে সাদা-কালোদের গোলের যাত্রা শুরু হয়। অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমির স্কয়ার পাস থেকে আর্জেন্টাইন ওয়াকিন মেনিনি রিভার্স হিটে গোল করেন। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে কোনো গোল হয়নি। তৃতীয় কোয়ার্টারের দ্বিতীয় মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে মোহামেডানকে এগিয়ে নেন পাকিস্তানি খেলোয়াড় তাসওয়ার আব্বাস। 

চতুর্থ কোয়ার্টারে মোহামেডান আরো দুই গোল করে। ৪৯ মিনিটে ভারতের সুনীলের স্কয়ার পাসে রাজীব দাস বক্সের মধ্যে শুয়ে স্টিক ছুইয়ে বল বোর্ডে পাঠান। ৩ মিনিট পর ম্যাচের সেরা মুহূর্ত উপহার দেন আর্জেন্টাইন মেনিনি। রাজীব দাসের মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বল বক্সের একটু সামনে রিসিভ করেন মেনিনি। দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আবাহনীর ডিফেন্ডারদের পাশ কাটিয়ে বক্সে প্রবেশ করে রিভার্স হিটে গোল করেন।

মোহামেডানের অভিষেক ম্যাচে জয়ে ভূমিকা রাখতে পেরে খুবই খুশি দুই আর্জেন্টাইন পেইলাত ও মেনিনি, ‘খুব ভালো লাগছে আমরা জয় দিয়ে শুরু করতে পারলাম। সুপার ফাইভেও এই ধারা বজায় রাখতে চাই।’ বাংলাদেশের হকিতে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় খেলা এবারই প্রথম। বাংলাদেশে আগমনের মাধ্যম সম্পর্কে তারা বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচয় হয় কয়েক বছর আগে। সেই সূত্রে আমরা এখানে এসেছি।’ 

মালয়েশিয়া ও ভারতের লিগ খেলা আর্জেন্টাইনরা বলছেন, ‘বাংলাদেশের লিগের মান যথেষ্ট ভালো। দর্শকের উৎসাহও রয়েছে।’ মোহামেডান মেরিনার্সের চেয়ে তিন পয়েন্ট পিছিয়ে। সুপার ফাইভে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে চান এই দুই আর্জেন্টাইন, ‘কাজটি কঠিন তবে আমরা সুপার ফাইভে আরো বেশি চেষ্টা করব।’ 

শুধু ফরোয়ার্ড নয় আবাহনীকে রক্ষণভাগেও ভালো পাহারা দিয়েছে মোহামেডান। পেনাল্টি কর্নারগুলো দারুণ দক্ষতার সাথে প্রতিহত করেছে সাদাকালোরা। আবাহনী বিদেশি ছাড়াই ক্লাব কাপের গ্রুপ পর্বে মোহামেডানকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল। আজ উঁচু মানের বিদেশি নিয়ে নামলেও মোহামেডানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। 

আবাহনী ক্লাব কাপে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হারিয়েছে। লিগেও সেই পথেই রয়েছে। লিগের প্রথম পর্ব শেষে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে মেরিনার্স শীর্ষে। মোহামেডান আবাহনীকে হারিয়ে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। আবাহনী মেরিনার্স থেকে ৬ পয়েন্ট দূরে। ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সুপার ফাইভ। চার ম্যাচের সুপার ফাইভে আবাহনী এই ছয় পয়েন্টের ব্যবধান ঘুচানো খুবই কঠিন।

এজেড