অ্যাথলেট ভিলেজ থেকে খানিকটা দূরে সেলকুকলু মিউনিসিপ্যালিটি স্পোর্টস হল। ইনডোর হল হওয়ায় বাংলাদেশ নারী হ্যান্ডবল দলের কোচ আমজাদ হোসেনের কন্ঠ শোনা গেল পুরো ম্যাচ জুড়েই। টাচলাইনে দাঁড়িয়ে সারাক্ষণ খেলোয়াড়দের বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ নারী হ্যান্ডবল দল তেমন খেলার সুযোগ পায় না। ইসলামিক সলিডারিটিতে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক তুরস্কের সঙ্গে ৫১-১০ গোলে হেরেছিল আমজাদের শিষ্যরা। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ের ব্যবধান কমে এসে দাড়িয়েছে ৪২-২০ গোলে। প্রথমার্ধে ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ১৯-০৫।

আগের ম্যাচের তুলনায় এই ম্যাচে গোল দেয়ার সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি গোল হজমের সংখ্যাও কমেছে। ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিট বাংলাদেশেই বেশি আক্রমণ করেছিল। তবে সময় যত গড়িয়েছে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ততই সরে গিয়েছে। উজবেকিস্তানের নারীদের ফিটনেস ও অভিজ্ঞতার কাছেই মূলত হেরেছে বাংলাদেশ।

ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশ নারী দলে খেলছেন দুই বোন রুবিনা ও পারভীন। দুই বোন একসঙ্গে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে খুশি বেশ, ‘আমাদের জন্য এটা দারুণ এক গর্বের। দেশকে এত বড় মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমরা খুব খুশি।’

বড় গেমসে দুই বোনের অংশগ্রহণ নতুন হলেও ভাইদের অংশগ্রহণের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৮২ এশিয়ান গেমসে দুই ভাই দুই খেলায় ছিলেন। ইমতিয়াজ সুলতান জনি ফুটবলে এবং এহতেশাম সুলতান হকিতে।

রুবিনা আগে ভলিবল ও অন্য খেলাও খেলতেন। গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে হ্যান্ডবল খেলোয়াড় হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন, ‘আসলে আমি অন্য খেলাতেও ভালো ছিলাম। তবে হ্যান্ডবলেই পরে সিরিয়াস হলাম। হ্যান্ডবলেই এখন মনোযোগ’-বলেন রুবিনা।

হ্যান্ডবলে আসা ও মনোযোগ বাড়ার পেছনে মূল কারণ তার স্কুল কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়, ‘আসলে ওই স্কুলে না পড়লে হয়তো আমার হ্যান্ডবলেই আসা হতো না। ওই স্কুলের জন্যই এত হ্যান্ডবল খেলোয়াড় আসছে’-বলেন ২০১৪ সালে এসএসসি পাশ করা রুবিনা। তার ছোট বোন পারভীনও সেই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন।

বাংলাদেশের নারী হ্যান্ডবলে বিশেষ অবদান রয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার শাহাবউদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়ের। পরম্পরায় বাংলাদেশের হ্যান্ডবল খেলোয়াড় সরবারহ করছে স্কুলটি। ইসলামিক সলিডারিটিতে অংশ নেওয়া দলে আটজন খেলোয়াড় রয়েছেন এই স্কুলের। কাজী শাহাবুদ্দিন স্কুলে খেলার চর্চা শুরুটা করেছিলেন ক্রীড়া শিক্ষক আবুল হোসেন। তার মাধ্যমে এই স্কুল জাতীয় পর্যায়ে নানা খেলায় অংশ নিত। অনেক খেলায় অংশ নিলেও হ্যান্ডবলেই মূলত এই স্কুলকে আলোকিত করেছে। আবুল হোসেন এই স্কুলে এখন না থাকলেও তার ধারাবাহিকতা বহন করছেন অন্যরা, ‘আমাদের স্কুলে খেলাধুলার ব্যাপারে স্যারেরা অত্যন্ত আন্তরিক। অনেক স্যার খেলার জন্য ছুটি দেন, আবার অনেকে সরঞ্জামও কিনে দেন’-বলেন রুবিনার বোন পারভীন।

এজেড/এইচএমএ