প্রথম আলো ছাড়তে বাধ্য হয়েছি, ব্যাপারটা এমন না : উৎপল শুভ্র
উৎপল শুভ্র
৪ নভেম্বর, ১৯৯৮। বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে স্মরণীয় একদিন। এদিনই রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রথম আলোর। যা পরে সময়ের পথ ধরে হয়ে ওঠে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক। পাঠকপ্রিয় এই পত্রিকার শুরু থেকেই জড়িয়ে ছিলেন উৎপল শুভ্র।
বিজ্ঞাপন
নিছকই জড়িয়ে ছিলেন বললে ভুল হবে, পত্রিকাটির উত্থানের পেছনে হাতে গোনা যে কয়েক জনের বড় ভূমিকা ছিল, তিনি তাদেরই একজন। পরিচয়টা ক্রীড়া সম্পাদক হলেও কাজের ব্যাপ্তি ছিল আরও বড়। প্রথম আলো ও উৎপল শুভ্রর সেই চমৎকার রসায়নটা হঠাৎ করেই একদিন ভেঙে যাবে, কে জানত?
যে প্রতিষ্ঠানের জন্ম যন্ত্রণার সঙ্গী হয়ে দেখেছেন চূড়ায় ওঠা, সেখান থেকে বিদায়টা অবশ্য হলো অকস্মাৎ। খোদ উৎপল শুভ্র নিজেও একদিন আগেও জানতেন না যে তিনি কারওয়ান বাজার ছাড়বেন। প্রথম আলোর সঙ্গে কাগজে-কলমে সম্পর্কের ইতি ঘটবে। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে দেশসেরা এই ক্রীড়া সাংবাদিক জানাচ্ছিলেন, অনেকটা ঝোঁকের বশেই ২০১৯ সালে তিনি ছেড়েছিলেন তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান। কেন তিনি প্রথম আলো ছেড়েছিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো অনেকের অজানা।
বিজ্ঞাপন
উৎপল শুভ্র বলছিলেন, ‘প্রথম আলো ছেড়ে চলে আসতে হলো কেন প্রশ্ন শুনলে মনে হয়, আমি প্রথম আলো ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। ব্যাপারটা এমন না। আমি আসলে নিজেই ছেড়েছি এবং সেটা খুব বেশি পরিকল্পনা করেও না। আমি সাংবাদিকতায় যেমন প্ল্যান করে আসিনি, প্রথম আলো থেকে রিজাইন করাটাও তেমনই প্ল্যান করে নয়। সারা জীবনই আমার মধ্যে লজিকের চেয়ে আবেগ বেশি কাজ করে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এটার আসলে নির্দিষ্ট কারণ বলা মুশকিল। আমি মজা করে বলি, আমি প্রথম আলোর চাকরি ছেড়েছি, প্রথম আলো ছাড়িনি। কারণ জীবনের একটা অংশ প্রথম আলো। আমার বন্ধু-বান্ধব সবাই ওখানে।’
স্মরণ করেছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের কথাও, ‘আমি সব সময় বলি, যতটুকুই যা হয়েছি, সেটার পেছনে মতি ভাই মানে মতিউর রহমানের অনেক বড় অবদান আছে। আমি এটাও বলি, প্রথম আলো না থাকলে হয়তো আমি উৎপল শুভ্র হতে পারতাম না। আবার একইভাবে আপনি যেটা বললেন, প্রথম আলোকেও হয়তো আমার লেখা সহায়তা করতেও পারে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে মতিউর রহমানের কাছে যা ঋণ আছে, সেটা শোধ করার কথা কল্পনাও করতে পারি না।’
উৎপল শুভ্র জানালেন, প্রথম আলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বিয়োগের পরও কোনো তিক্ততা নেই, ‘ প্রথম আলোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তিক্ত তো নয়ই, বরং আমি বলব, সম্পর্কটা এখনো মধুরই আছে। আমি তো বলব কাজের সম্পর্ক নয় বলে এখন তা আগের চেয়েও মধুর। প্রথম আলো থেকে বের হয়ে এসে আমি নতুন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি। আমি আসলে চাকরি ছাড়ার আগের দিনও জানতাম না পরের দিন চাকরি ছেড়ে দেব। জানি, এটা অবিশ্বাস্য শোনাবে। আমাদের প্রচলিত অর্থে ভালো আর নিরাপদ চাকরি। কিন্তু কথাটা সত্যি। বললাম না, পুরোটাই ঝোঁকের মাথায়। কাজটা আসলে আগের মতো এনজয় করছিলাম না। ছাড়ার কিছুদিন পর আমার খুবই মন খারাপ হয়েছে। জীবনের একটা অংশ এটা, প্রায় ২০-২১ বছর কেটেছে। বন্ধু-বান্ধবসহ সবই এখানে। ছাড়ার পরও প্রথম আলোতে আমি পঞ্চাশটারও বেশি লেখা লিখেছি। হয়তো কোনো বাঁকে গিয়ে মিলেও যেতে পারি আবার। আমার দিক থেকে কোনো তিক্ততা নেই, প্রথম আলোর দিক থেকেও না। আমি তো সুযোগ পেলেই এখনো প্রথম আলোতে যাই।’
পুরকৌশলে স্নাতক পেশাদার ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে উৎপল শুভ্রর পথচলা শুরু ১৯৮৯ সালে। কাজ করেছেন আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ হয়ে প্রথম আলোতে। ১৫ মার্চ শুরু হচ্ছে নতুন অধ্যায়। খেলা নিয়ে যারা ভাবেন, খেলাকে যারা ধ্যানজ্ঞান মনে করেন, তাদের জন্য উৎপল শুভ্র ডট কম নামে ওয়েবসাইট নিয়ে আসছেন তিনি। যেখানে থাকবে খেলা ও খেলার পেছনের খবর বিশ্লেষণ, কালজয়ী ছবি ছাড়াও টুকরো ডায়েরি।
এটি/এমএইচ