রোববার থেকে শুরু হয়েছে সারা দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন টিকা দান কর্মসূচি। প্রথম দিনেই দেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ টিকা নিয়েছেন। ক্রীড়াবিদদের অনেকে ভ্যাকসিন দিতে আগ্রহী আবার অনেকে সময় নিতে চাচ্ছেন।

দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার ভ্যাকসিন নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভ্যাকসিন নেয়ার পক্ষে।অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন, আমার সংস্থা (বাংলাদেশ নৌবাহিনী), অথবা বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন যে কোনো মাধ্যমে আমার ভ্যাকসিন দেয়ার সুযোগ আসলে আমি ভ্যাকসিন দেব।’ 

ক্রীড়াবিদদের ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিলেন শিরিন, ‘অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ভ্যাকসিন আমাদের দেশে এসেছে।ইতোমধ্যে চিকিৎসক, পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর আসেনি। ফলে ক্রীড়াবিদরা এই ভ্যাকসিন দিতেই পারে।’

দেশ সেরা আরচ্যার রোমান সানার টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেয়ার কথা। রোমান সানাও ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী, ‘ফেডারেশন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হয়েছে। আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়েছি। জানি না কবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। যেদিনই দেওয়া হোক, আমি দেব।’ 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য এই ভ্যাকসিন অলিম্পিয়ানদের এখনই না নেওয়ার একটা নির্দেশনা দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে রোমান বলেন, ‘আমাদের দেশে আল্লাহর রহমতে এখনো কোনো সমস্যা হয়নি। আমি মনে করি ভ্যাকসিন দেওয়াই যায়।’

দুই বার অলিম্পিকে অংশ নেওয়া সাতারু এবং দেশের অন্যতম শীর্ষ সাতারু মাহফিজুর রহমান সাগর অবশ্য একটু সময় নিতে চান, ‘আমি এখনই ভ্যাকসিন দিতে চাই না। সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় চলছি। আরও কিছুদিন যাওয়ার পর ভ্যাকসিনের সিদ্ধান্ত নেব।’ 

সাতারু সাগরের মতো একই অবস্থানে দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের, ‘করোনা এখন আগের সেই ভীতিকর অবস্থানে নেই। এজন্য আমি কিছুটা সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই। এখনই ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুক নয় আমার পরিবার।’ 

জিয়া ছাড়া অন্য চার গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ, রিফাত বিন সাত্তার, এনামুল হোসেন রাজীব ও আব্দুল্লাহ মোল্ল্যা রাকিব ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। ফেডারেশন ইতোমধ্যে এই চার গ্র্যান্ডমাস্টারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে।
 
জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূইয়া কলকাতায়। তিনি এই ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও আবাহনীর সিনিয়র ফুটবলার মামুনুল ইসলাম ফেডারেশন ও ক্লাবের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন, ‘আমরা এখন লিগ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। ইতোমধ্যে দুটো ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়েছি। ফেডারেশন ও ক্লাব থেকে নির্দেশনা আসলে তখন সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেব।’ 

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ এই প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আজ মাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া শুরু হলো। ৫৫ বছরের উর্ধ্বে যারা তাদের জন্য সরকার ইতোমধ্যে উন্মুক্ত করেছে। আমাদের ফুটবলাঙ্গনে যারা ৫৫ উর্ধ্ব তাদের জানিয়েছি। এছাড়া আমরা সরকারের কাছে ভ্যাকসিন চেয়েছি। ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পর আমাদের মেডিকেল কমিটি একটি গাইডলাইন তৈরি করবে।’

লিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে কিংসেই জাতীয় দলের ফুটবলার সংখ্যা বেশি। কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজন বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না। লিগ চলমান রয়েছে। ক্লাব ও ফেডারেশনের গাইডলাইন পেলে লিগের বিরতির মধ্যে এই বিষয়ে খেলোয়াড়, কোচরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’

দেশের ফুটবলে বিদেশি কোচরা কাজ করছেন। জাতীয় দলের ব্রিটিশ হেড কোচ জেমি ডে এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন নেবেন না বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, ‘আমি করোনা থেকে সেরে উঠেছি। আমার শরীরে ৬ মাস এন্টিবডি রয়েছে। ৬ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন দেব না। পরে প্রয়োজন লাগলে দেব।’
 
১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস। যেখানে কয়েক হাজার ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করবেন। গেমসের আগে ভ্যাকসিন দিতে চান দ্রুততম মানবী শিরিন, ‘এখন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ। গেমস আসতে আরও দেড় মাস। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমার পরামর্শ ও অনুরোধ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী ক্রীড়াবিদদের গেমসের আগেই যেন দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় ইতোমধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে ফেডারেশনগুলোর কাছে ভ্যাকসিন দিতে আগ্রহীর নাম জানতে চেয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে বরেণ্য ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের নামও চাওয়া হয়েছে। 

এজেড/এমএইচ