টেস্ট অভিষেকেই স্বপ্নের মতো এক ইনিংস খেললেন মেয়ার্স/ ছবি : ইএসপিএন ক্রিকইনফো

ডাবল সেঞ্চুরি করে ব্যাটটা ছুঁড়ে দিলেন আকাশে। তিনি যা করলেন, তার উচ্চতা বুঝাতেই কি? এই প্রশ্নের উত্তর কাইল মেয়ার্সই দিতে পারবেন ঠিকঠাক। তবে ম্যাচ শেষে কর্ণওয়েলের সঙ্গে প্রান্ত বদল করে যখন নিশ্চিত করলেন জয়। চোখেমুখে যে তৃপ্তির ছাপ তখন, চারপাশে মেয়ার্স মুগ্ধতার আবেশ। তাতে হয়তো খানিকটা পরিমাপ করা যায় তিনি যা করলেন, তার ওজন, বীরত্ব অথবা বিশালত্ব।

চতুর্থ দিন থেকেই ধুলো উড়ছে ক্রিজে, বল টার্ন করছে, লো করছে, হঠাৎ লাফিয়েও উঠছে। কাইল মেয়ার্সের তাতে কিছু যায় আসে না। তার অভিষেক টেস্ট, সাদা পোশাকে প্রথমবার ব্যাটিংয়ে নেমেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, সব যেন ভুলে গেলেন বেমালুম। খেললেন, লড়াই করলেন, জিতলেন, জেতালেন। আর কী কী করলেন, সে হিসাব কষাটা কঠিনই করে দিলেন।

মেয়ার্স কি টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস খেললেন সাগরিকায়? সেরার মানদন্ডে সবসময়ই বির্তক থাকে। সেটা;  বাংলাদেশী জাতীয়তা একপাশে সরিয়ে রাখলে, কাইল মেয়ার্স যে মুগ্ধতার আবেশে জড়িয়ে রাখলেন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামকে, তাতে তার প্রশংসা তো প্রাপ্য।

এনক্রমাহ বোনারের সঙ্গে চতুর্থ দিনে যখন জুটি বাঁধলেন, তখন সামনে প্রায় চারশ ছুঁই ছুঁই লক্ষ্য। স্কোরকার্ডে ৫৯ রানে জমা হতেই নেই তিন উইকেট। সামনে অনিশ্চয়তায় ঘিরে থাকা পথ। হেরে যাওয়ার শঙ্কায় ঢেকে যাওয়া সব। মেয়ার্স তখন হাল ধরলেন সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছায় থাকা এক ডিঙি নৌকার।

যেটা ডুবে যাওয়াটাই সহজাত। মেয়ার্স যদি তা হতে দেন, তাহলে কি করে ঠাঁই করবেন ইতিহাসের পাতায়? মেয়ার্স ডুবতে দেননি নৌকা। পাড়ি দিয়েছেন সমুদ্র। উইন্ডিজদের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। 

২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রান তাড়া করেছিল ক্যারিবীয়ানরা। দলের পাশে নিজেও গড়েছেন রেকর্ড। চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা মাত্র ষষ্ঠ ক্রিকেটার হয়েছেন তিনি। 

এর আগে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭১ রান করেছিলেন ইউনিস খান। এশিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের মালিকও এখন মেয়ার্স। এমন আরও কত কীর্তিই নিজের করে নিয়েছেন, তার তো অন্ত নেই।

তবে তার চেয়ে বেশি দেখিয়েছেন কেন ‘টেস্ট ক্রিকেট, বেস্ট ক্রিকেট’। লড়াই, ত্যাগ, ধৈর্য্য আর দৃঢ়তার অনন্য এক দৃষ্টান্ত বনেছেন। সাগরিকায় যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন মেয়ার্স, তা আদতে লিখেছে ইতিহাসের পাতা। কিছু নতুন করে, কিছু করেছে উলটপালট।

রেকর্ড বুক ভুলে গেলেও। কাইল মেয়ার্সের ৩১০ বলে, ২০ চার আর ৭ ছক্কায় ২১০ রানের ইনিংস আপনাকে মনে রাখতে হবে। ক্রিকেটপ্রেমী হলে আপনি চাইলে মনে রাখতে পারেন ম্যাচ জয়ের পর মেয়ার্সের হাসিটাও, যেটা হয়ে থাকবে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছবি।