এ প্রজন্মের অনেকেই জানে না ঈদ কার্ড কী? ১৫ বছর আগেও ব্যাপকভাবে প্রচলন ছিল ঈদ কার্ডের। তখন ঈদ এলেই চাঁদরাত পর্যন্ত বন্ধুরা একে অন্যকে কার্ড দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানাত। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ঈদ কার্ডের সেই রেওয়াজ। এখন আর কেউ কাউকে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানায় না। সেই জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। 

ঈদের শুভেচ্ছা এখন সবাই জানায় ফেসবুক মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। সেই সঙ্গে ইমো, টুইটার, ই-মেইলে টুং একটা শব্দের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত মোবাইলে স্ক্রিনে ভেসে উঠছে ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা।

এছাড়া কয়েক বছর আগেও অনেকে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে এসএমএসের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হেতো। বলতে গেলে এই রেওয়াজটাও এখন আর নেই। এখন সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায়।

অন্যদিকে ৫-৭ বছর আগেও শহরের অলিগলি পাড়া মহল্লায় কিশোররা মিলে বানাত অস্থায়ী দোকান, সেখানে জায়গা পেত হরেক রকমের ঈদ কার্ড। এসব দোকান থেকে ঈদ কার্ড সংগ্রহ করে বন্ধুদের ঈদ শুভেচ্ছা জানত তারা।  সেই সময়ের ঈদ কার্ডগুলোর ভেতরে কবিতা, শুভ কামনার বার্তাসহ নানা কথা লিখা থাকত।  

কিন্তু এসব প্রচলনের ইতি টেনে এখন সবাই ভার্চুয়ালি ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সোমবার ( ২ মে) ঈদের আগের সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মোবাইল স্ক্রিন ভরে গেছে অনলাইন ঈদ শুভেচ্ছা বার্তায়।

রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিলা তাবাসুমকে জিজ্ঞেস করা হলো বন্ধুদের ঈদ কার্ড এবার দিয়েছে কি না? তার উত্তরে জানা গেলো সে ঈদ কার্ড কি তা জানে না। বুঝিয়ে দেওয়ার পর নাবিলা বলে, একটু পর আম্মুর মোবাইলটা নিয়ে বন্ধুদের ফেসবুক আর হোয়াটস অ্যাপে শুভেচ্ছা জানাব।

এরপরই ঈদ কার্ড নিয়ে কথা হয় নাবিলার মা বেসরকারি চাকরিজীবী সানজিদা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা ঈদ কার্ড সম্পর্কে  জানে না। অথচ আমরা যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম বা ছোট ছিলাম তখন বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে আপনজনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতাম ঈদ কার্ডের মাধ্যমে। তখন এমন সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ছিল না। আসলেই সে সময় খুব মিস করি। এখন শখ করে কাউকে ঈদ কার্ড দিতে চাইলেও ঈদ কার্ড আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠান এলিট এক্সপ্রেসের মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন সাইদুল ইসলাম। ঈদ কার্ড বিষয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, পুরাতন দিনের স্মৃতি তুলে আনতে এবার চেয়েছিলাম স্ত্রীকে একটা ঈদ কার্ড দেবো। আমরা যখন কলেজে পড়েছি তখন একে অপরকে ঈদ কার্ড দিতাম। সেই সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনতে এবার ঈদ কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু ঈদ কার্ডে খুঁজেই পেলাম না। আগে পাড়া মহল্লায় ছোট ছোট বাচ্চারা ঈদ কার্ডের অস্থায়ী দোকান দিত, এবার সেগুলোও দেখতে পেলাম না।

তিনি আরও বলেন, আগেও ঈদ আসলে ক্লায়েন্টদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ঈদ কার্ডের অর্ডার দেওয়া হতো। কিন্তু এই প্রচলন এখন আর নেই। এছাড়া কয়েক বছর আগেও ঈদ কার্ডের পরবর্তীতে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে ব্লাক এসএমএস কিনে একসঙ্গে গ্রুপ করে ক্লায়েন্টদের পাঠানো হতো। সেই চলও উঠে গেছে, এখন সবাইকে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইলের, টেলিগ্রামের মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হয়।

রাজধানীর পল্টনে কার্ডের বেশ কয়টি দোকান ঘুরে কথা হয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সেখানে ন্যাশনাল প্রোডাক্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, আগে ঈদ মৌসুমে কার্ডের রমরমা ব্যবসা ছিল। সবাই সবাইকে ঈদ কার্ড দেওয়ার একটা প্রচলন ছিল। সেই ব্যবসা এখন আর নেই। এছাড়া পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলো, বিভিন্ন সংগঠন, কর্পোরেট অফিসের ঈদ কার্ডের অর্ডার আসত, আমরা ঈদের আগে দম ফেলার সময় পেতাম না। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন ঈদ কার্ডের ব্যবসা হারিয়ে গেছে। এখন সবাই ডিজিটালি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায়। বর্তমান প্রজন্মের অনেকে ঈদ কার্ডের বিষয়টা জানেও না।

এএসএস/এসকেডি