চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসতে চাওয়া নারীদের যে পরামর্শ মোবাশশিরা হাবীবের
মোবাশশিরা হাবীব খান। ৩০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার। বর্তমানে তিনি জেলা গোয়েন্দা শাখা, ঢাকায় কর্মরত আছেন। চাকরি জীবনে প্রশংসনীয় ও ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন দুইবার আইজি’জ ব্যাজ ও একবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক।
বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূল পরিবেশ অতিক্রম করে নিজেকে কীভাবে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন ঢাকা পোস্টকে সেই অভিজ্ঞতা জানালেন এ সরকারি কর্মকর্তা। একইসঙ্গে এ চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসতে চাওয়া নারীদের জন্য দিয়েছেন পরামর্শও।
তিনি বলেন, পুলিশের মতো একটি পেশায়, যেখানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দুর্ধর্ষ অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হয় সেখানে নারীদের কাজ করা মূলত ভীষণ চ্যালেঞ্জের। তাই আমার মতে, নারী কর্মকর্তা হিসেবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সমন্বয় প্রয়োজন। প্রথমত, নারীর এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং পেশায় কাজ করার জন্য মানসিক দৃঢ়তা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবারের সদস্যদের থেকে দায়িত্বশীল আচরণ। তৃতীয়ত, কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাকে তার যোগ্যতাকে প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া।
মোবাশশিরা হাবীব খান বলেন, আমাদের বিশ্বাস করতে হবে নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ব্যতীত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব। নারীদের উন্নয়নে শুধু পুরুষ নয়, নারী-পুরুষ সবারই ভূমিকা পালন করতে হবে। সামাজিক অবকাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। নারী, পুরুষ উভয়ই কর্মজীবী হবে এবং তাদের পারিবারিক দায়বদ্ধতাও সমান হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমধিকারের সূচনা হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। তারই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য বহুমুখী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য রোল মডেল। তবে রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম একক পরিবার ও সমাজকে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কর্মজীবী নারীদের কাজের ক্ষেত্রটা কখনোই মসৃণ ছিল না। তবে আশার কথা হচ্ছে, দিন দিন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এক সময় ঘরের কাজ, সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব একমাত্র নারীরই ছিল। এখন নারীরা কর্মক্ষেত্রেও তাদের দৃপ্ত পদচারণা রেখেছেন। তবে পেশাগত ও পারিবারিক জীবনে নারীকেই সব দায়িত্ব পালন করতে হবে, এই ধ্যান-ধারণাই নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা।
আরও পড়ুন
নিজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যদের মতো আমিও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। তবে সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নারীর এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা ও সাহস।
উল্লেখ্য, মোবাশশিরা হাবীব খান নেত্রকোনার পূর্বধলা থানায় ১৯৮৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আহসান হাবীব খান ও মা শামীমা আক্তার খান। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। পরে ৩০তম বিসিএস পুলিশের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদায় বাস্তব প্রশিক্ষণ শেষে প্রথমে তিনি এএসপি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং এসি ফিমেল পুলিশ, এসি ট্রাফিক, এডিসি ট্রেনিং, এডিসি ফিমেল পুলিশ হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। এখন তিনি জেলা গোয়েন্দা শাখা, ঢাকায় কর্মরত আছেন।
এনআই/এমএ