নিহত নেজাম ও ছালেকের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত হন নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক নামের দুজন। তাদের মধ্যে নেজামের মরদেহের পাশে অত্যাধুনিক ও প্রাণঘাতী একটি পিস্তল পাওয়া যায়। যেটি চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হয়েছিল। এ ঘটনায় বুধবার (৫ মার্চ) সাতকানিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নাজমুল হাসান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন– কাঞ্চনা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কবির আহাম্মদের ছেলে আলমগীর (২০), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সাত্তারের ছেলে ফরহাদ (৪০), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলমগীরের ছেলে মো. ফারুক প্রকাশ কালা ফারুক, উত্তর কাঞ্চনা দীঘির পাড় এলাকার গুরা মিয়ার ছেলে সাইফুদ্দীন প্রকাশ সাবু এবং এওচিয়া ইউনিয়নের চুড়ামণি এলাকার আব্বাস উদ্দিনের ছেলে সিএনজিচালক হারুন। আসামিরা সবাই নেজাম ও ছালেকের সহযোগী এবং তারা ওইদিন এলাকাবাসীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এজাহার ও পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী নেজামের মরদেহের পাশে থেকে উদ্ধার করা পিস্তলটি ‘টরাস টিএইচ’ মডেলের ৯ মিলিমিটার ক্যালিবারের পিস্তল। TKU39161 নম্বরের পিস্তলটি বডির ওপরের অংশের এক পাশে TAURUS BP-2017 MTC MADE IN BRAZIL এবং অপরপাশে TH9 9X19 লেখা আছে। সিরিয়াল মিলিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে অস্ত্রটি নগরের কোতোয়ালি থানায় ব্যবহৃত হতো।
৪ দশমিক ২৭-ইঞ্চি ব্যারেল ও অ্যাডজাস্টেবল টু-ডট রিয়ার সাইট সুবিধার কারণে আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি দিয়ে নিখুঁত লক্ষ্যে গুলি করা যায়। মাত্র ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পিস্তলটির সঙ্গে দুটি ম্যাগাজিন থাকায় এতে ১৭-রাউন্ড গুলি রাখা যায়, যা দিয়ে অনেকক্ষণ শুট করা যায়। বিশেষায়িত পিস্তলটি তৈরি হয় ব্রাজিলের সাও পাওলোর কারখানায়। এ ছাড়া গুলির পাশে প্রাপ্ত ছয়টি গুলির খোসার পেছনের অংশে ইংরেজিতে NR BP 2020 লেখা আছে।
আরও পড়ুন
সেদিনের ঘটনার বিষয়ে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩ মার্চ রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে আবু ছালেক ও মো. নেজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জন অস্ত্রধারী হেলমেট পরিহিত অবস্থায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ৬-৭টি সিএনজিযোগে ছনখোলা পশ্চিম পাড়া বাজারে ঘোরাফেরা করে। স্থানীয় লোকজন ডাকাত সন্দেহে আসামিদের ধাওয়া করলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে করতে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে আটক করে।
আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে এওচিয়ার ছনখোলা ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওবায়দুল (২০), নাছির (৩৫), আব্বাস (৩০), মামুন (৪০), সাইদ (২৪) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। স্থানীয় লোকজন আহত হওয়ার কারণে উপস্থিত লোকজনদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উত্তেজিত জনতা আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে এবং আসামিদের ফেলে যাওয়া সিএনজিটি ভাঙচুর করে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। উত্তেজিত জনতার মারধরের ফলে ঘটনাস্থলে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এজাহারনামীয় ১ থেকে ৬ নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জন কৌশলে গুলি বর্ষণ করতে করতে ঘটনাস্থল থেকে সিএনজিযোগে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাওয়ার সময় এজাহারনামীয় ৬ নম্বর আসামির চালিত অজ্ঞাত নম্বরের সিএনজি এবং তাদের ব্যবহৃত জব্দ করা আগ্নেয়াস্ত্রটি ঘটনাস্থলে ফেলে যায়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, স্থানীয়ভাবে তদন্তকালে জানা যায় এজাহারনামীয় আসামিদের স্বভাব-চরিত্র ভালো নয় এবং তারা মৃত আবু ছালেক ও মৃত মো. নেজাম উদ্দিনের সহযোগী মর্মে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। আসামিরা ইতোপূর্বেও ঘটনাস্থল এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নিমিত্তে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে বলে জানা যায়। মৃত আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে এজাহারনামীয় ১ থেকে ৬ নম্বর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জন আসামি পরস্পর যোগসাজশে ও জ্ঞাতসারে অস্ত্রশস্ত্র নিজেদের হেফাজতে রেখে ‘দ্য আর্মস অ্যাক্ট ১৮৭৮’ এর ‘১৯এ’ ধারার অপরাধ করেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম সানতু নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, গণপিটুনির ঘটনায় অনেকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা বলছেন। ঘটনার সময় বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের কোনো ব্যক্তি বা চেয়ারম্যানের উপস্থিতি ছিল কি না, প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে আমরা এ ধরনের কারো উপস্থিতি খুঁজে পাইনি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে খুন হন নেজাম ও ছালেক। ঘটনার দিন তারা সাতটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন। তারা চাঁদার জন্য নিয়মিত সেখানে যেতেন বলে পুলিশ তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। চার থেকে পাঁচ দিন আগেও তারা সেখানে গিয়ে এক ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরেছিলেন। যে কারণে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, সাতকানিয়ায় মারা গেছেন নেজাম এবং ছালেক। ছালেকের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে, তার মধ্যে দুটি হত্যা। এ ছাড়া চুরি ও বিস্ফোরক আইনেও মামলা আছে। নেজামের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। তাদের গতিবিধি যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি, বিগত তিন মাসে ওই এলাকায় তারা বিভিন্ন কাজে গিয়েছেন অন্তত আট বার। ঘটনার দিন তারা সাতটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে গিয়েছিলেন। সেখানকার দোকানদারদের অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন।
এমআর/এসএসএইচ