মুশতাকের মৃত্যু : প্রতিবাদী আওয়াজে উত্তাল শাহবাগ
টিএসসি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়
কাশিমপুর কারাগারে আটক থাকা অবস্থাতেই লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদে সরব হয়ে রাস্তায় নেমেছেন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। শাহবাগে তারা অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছেন। ফলে এই সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
গত বছরের মে মাস থেকে কারাবন্দি ছিলেন মুশতাক। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। কারা সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মুশতাককে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল বের করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে আজকের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সে মোতাবেক বেলা সাড়ে ১১টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর শতাধিক নেতাকর্মী। এতে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। শাহবাগ-সায়েন্সল্যাবমুখি রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
আজকের সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, করোনার ১১ মাসে দেশে যে মহালুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন লেখক মুশতাক। এই সরকার এতই অসহিষ্ণু, তার মসনদ এতই দুর্বল যে এই ন্যুনতম সমালোচনাও সহ্য করতে পারেনি। যেই এ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করবে তাকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ঠেলে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় দমন নিপীড়নের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে লেখক মুশতাক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আজ কার্টুনিস্ট কিশোরও অসুস্থ অবস্থায় টানা ৯ মাস কারাগারে আছেন। সরকারের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ধিক্কার জানাই এবং সে সাথে ফ্যাসিবাদি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, যে সমাজে কথা বলার মতো কেউ থাকে না সে সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে মেরুদণ্ড ভাঙার সে আয়োজন চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় লেখক মুশতাক হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাই শেষ হবে না, যদি তার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ না করি, প্রতিরোধ না তুলি। এভাবে একের পর এক সাধারণ মানুষ, নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। আসুন প্রতিবাদের ঝাণ্ডা হাতে নিই।
ফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব কান্তি রায় বলেন, এটা কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়। এটা একটা রাষ্ট্রীয় খুন। এর মাধ্যমে জনগণের মাঝে সরকার একটা ভীতি তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমরা সরকারের এই চেষ্টা সফল হতে দেবো না।
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, এই হত্যায় আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। বন্ধুগণ একটা কথা স্পষ্ট- আপনার কথা বলার অধিকার যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে আপনি যে মানুষ সেটাও অস্বীকার করা হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মানুষ বন্দী রয়েছে। আর কত! আর কত মানুষ মরলে আমরা জাগব। সবাই আসুন সারাদেশে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, আজ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই বললে চলে। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি রাষ্ট্র এই লেখককে হত্যা করেছে। তার দোষ ছিল সে যুক্তিক বিষয়ে লেখালেখি করতো। এভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনে এভাবে আর কত মানুষকে হত্যা করা হবে, গ্রেফতার করা হবে! আমরা এই লাশের ওপর শপথ করে বলছি এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী এই স্বৈরাচারী সরকার।
এনএফ