বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ আর সৎ নেতৃত্বের ফলেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গৌরবের সাথে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছেই অজানা ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বই দুটি এই অজানা ইতিহাসকে উন্মুক্ত করেছে সবার সামনে। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মের কাছে এই বই দুটি অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তরুণ প্রজন্মের কিশোররা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর বই নিয়ে তাদের অভিব্যক্তি।

যে বাংলাদেশে আজ আমরা দাঁড়িয়ে, তার পেছনে অসামান্য অবদান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধুর যে দীর্ঘ ত্যাগ, তা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচাতে সুচারুরূপে বর্ণনা করেছেন তিনি। তার লেখনীতে শুধু নিজের ও পরিবারের কথা ফুটে ওঠেনি, তিনি তুলে ধরেছেন তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নেতা-কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা, শাসকগোষ্ঠীর নির্মম-নির্যাতন ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে তার জীবনদর্শন। একজন বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গর্ববোধ করি, তার লেখা থেকে অনুপ্রেরণা পাই। শত কঠিন পরিস্থিতিকে তিনি দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যেভাবে মোকাবিলা করেছেন সত্যিই তা মুগ্ধ করে। নেতৃত্বের বিকাশের জন্য তাকে স্মরণ করছি বার বার।

ভালো হতো যদি বঙ্গবন্ধু আরও কিছুদিন বাঁচার সুযোগ পেতেন, তার কলমে উঠে আসতো আরও অজানা ইতিহাস। স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু যে আদর্শের বীজ বপন করেছেন, আজকের এই স্বপ্নবাজ তরুণ প্রজন্মের জন্যে নিঃসন্দেহে তা অনেক। যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন ও সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজ ক্ষেত্রে প্রয়োগের চেষ্টা করি, নিশ্চয়ই শত শত বিজয় আমাদের মুঠোয় ধরা দেবে।
গাজী আনিস, সমাজকর্মী

রাজনীতি যখন রাজার নীতিতে পরিণত হয়েছে আর তরুণরা যখন হতাশায় নিমগ্ন, তারা কাকে অনুসরণ করবে? রাজনীতিতে কেউ কি আছেন যিনি যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণাযোগ্য? তখন যে নামটি আমাদের মাঝে আসে তা হলো বঙ্গবন্ধু নাম। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শনে অনুপ্রাণিত একজন তরুণ কখনোই আদর্শচ্যুত হয়ে দেশের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে না। তাই প্রতিটি তরুণের উচিত এই মহান ব্যক্তির আদর্শ ধারণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন কোটি তরুণের স্বপ্ন দেখার একমাত্র অনুপ্রেরণা। একজন তরুণের প্রথম দায়িত্ব জ্ঞানার্জন, তারপর সমাজসেবা বা অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজ করা। বঙ্গবন্ধুও তরুণদের এই উপদেশটাই দিতেন। তিনি বলেন, “পড়ো, জানো, শেখো, বোঝো। তারপর বিপ্লবের কথা বলো। বিপ্লব রাতের অন্ধকারে গুলি কইরা টেরোরিজম কইরা হয় না। মানুষ মরতে পারে কিন্তু নীতি বা আদর্শ মরে না কোনোদিন।’’

অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আমরা আরও দেখি বঙ্গবন্ধু কিভাবে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কাজের চাপে অসুস্থ হয়েও কিভাবে কর্ম পালনে পিছপা হননি, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা কিভাবে তার মনে পীড়া দিয়েছে সেসব বিষয়।

বঙ্গবন্ধু তার ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ১৮৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, যারা এই অত্যাচার করে তারা কিন্তু নিজ স্বার্থ বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্যই করে থাকে। সকলেই তো জানে একদিন মরতে হবে। তবুও মানুষ অন্ধ হয়ে যায় স্বার্থের জন্য। হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। পরের ছেলেকে যখন হত্যা করে, নিজের ছেলের কথাটি মনে পড়ে না। মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।

একবার বঙ্গবন্ধুর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুকে খুলনা থেকে ফোনে জানালেন: “তুই আমাকে দেখতে আয়, আমি আর বেশিদিন বাঁচব না।” মমতাময়ী মায়ের আকুল আহ্বানে কেউ কি সাড়া না দিয়ে পারে? বঙ্গবন্ধু বাবা-মা দুজনেরই অতি আদরের ‘খোকা’। যদিও তখন বঙ্গবন্ধুর বয়স ৪৭, তিনি পাঁচ সন্তানের জনক। তারপরও তিনি বাবা-মার গলা ধরে আদর করেন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের স্নেহধন্য পুত্র। 

বঙ্গবন্ধু লিখেছেন : আমি জানি না আমার মতো এত স্নেহ অন্য কোনো ছেলে পেয়েছে কি না! আমার কথা বলতে আমার আব্বা অন্ধ। আমরা ছয় ভাইবোন। সকলে একদিকে, আমি একদিকে। খোদা আমাকে যথেষ্ট সহ্যশক্তি দিয়েছে, কিন্তু আমার আব্বা-মার অসুস্থতার কথা শুনলে আমি পাগল হয়ে যাই, কিছুই ভালো লাগে না। খেতেও পারি না, ঘুমাতেও পারি না, তারপর আবার কারাগারে বন্দি।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, যার নেতৃত্বে আমরা মহান স্বাধীনতা পেয়েছি তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু কোনো দলের আদর্শ নন। তিনি সমগ্র বাঙালির, প্রতিটি খেঁটে খাওয়া মানুষের, প্রতিটি তরুণের অনুপ্রেরণা। আর আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হলে তার রচিত সেরা দুটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়া একান্ত প্রয়োজন।
রায়হান হোসেন। শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ। 

‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’
তরুণ সমাজের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অনুপ্রেরণার নাম। তিনি তরুণদের কাছে একাধারে জীবন সংগ্রামের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ও আদর্শের প্রতীক; অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কারিগর, উদার ব্যক্তিত্ব, সফল রাজনীতিবিদ। আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আজও তরুণ সমাজকে নতুন করে ভাবতে শেখায়।

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী আমার প্রেরণার বাতিঘর। তার বই পাঠ করে সহজেই বুঝতে পেরেছি যে তার চিন্তা-চেতনা ছিল তারুণ্যকেন্দ্রিক। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও আবেগই পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদী রূপ ধারণ করে তার মন ও মননে সূচনা ঘটিয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের। বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, অধিকার পেতে হলে নীরব থাকলে চলবে না; সবাইকে জাগাতে হবে, তাদের মনে গেঁথে দিতে হবে স্বাধীনতার মন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধে হাজারও তরুণ বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেছিল স্বাধীনতার জন্য। তারুণ্যের সেই আত্মত্যাগ চিরস্মরণীয়। নতুন প্রজন্মের কাছে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মাত্র ১০ মাসের মাথায় শহীদের রক্তে লিখিত সংবিধান দেশবাসীকে উপহার দেন। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ মূলনীতি লিপিবদ্ধ করে তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেন।
ওমর ফারুক, শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা বইটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যা লিখবো তাই কম হয়ে যাবে। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি মিলেছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানা ধরনের অত্যাচার আর নির্যাতনে দিশেহারা বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের আহ্বানে সঠিক পথের দিশা খুঁজে পেয়েছিল। তারপর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো মানুষের জীবন, মা-বোনের ইজ্জত আর সীমাহীন ত্যাগ-তিতীক্ষার পর স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করে বাঙালি জাতি। জন্ম হয় বাংলাদেশ নামের নতুন রাষ্ট্রের।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তখন হাহাকার। শক্ত করে দেশের হাল ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ভাঙা সেতু জোড়াতালি, রাস্তা নির্মাণ, শরণার্থীদের পুনর্বাসন, অভাবীদের খাদ্য বিলিয়ে দেওয়া— এর সবটাই করেছিলেন মানবতার বন্ধু বঙ্গবন্ধু মুজিব। একদিকে তিনি দেশ নির্মাণ করার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আর স্বপ্ন দেখেছেন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। কিন্তু হায় তিনি সেই সমৃদ্ধি চোখে দেখে যেতে পারেননি। হায়েনারা নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু তারা ব্যর্থ  হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অমর হয়ে থাকবে বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায়।
নাবিলা নাজ আমিন, ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচটি/এনএফ