পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু করে সদরঘাট এলাকার ফুটপাতে শ্রমজীবী হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আক্তার হোসাইনের নামে প্রতি দোকান থেকেই চাঁদা তোলা হয়। ওই টাকার একটি বড় অংশ কর্মীদের হাত হয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পকেটে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বুধবার (২৯ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন। সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল হাশিম কবির ও সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে সদরঘাট ফ্লাইওভার পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে হকারি করে প্রায় শতাধিক লোক জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টায় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টায় জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপ পরিচয়ে পর্যায়ক্রমে দুইবার দল বেঁধে হকারদের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়। 

চলমান এই জুলুম-নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়, কোনো হকার দাবিকৃত অংকের টাকা দিতে অপারগ হলে তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। গত চার মাস থেকে এই অত্যাচার চলছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েও হকারদের এই সংকটের সুরাহা করা সম্ভব হয়নি।

বাহাদুর শাহ পার্ক ও সদরঘাট এলাকার হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন দোকান প্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। এভাবে ওই এলাকায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি দোকান থেকে মাসে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা চাঁদা নেয় ছাত্রলীগ। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিছু কর্মীদের কাছে দোকানগুলো ইজারা দিয়ে দিয়েছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নেন। আর কর্মীরা যা বেশি তুলতে পারেন নিজেরা রাখেন। এজন্য এখন আমাদের ওপর বেশি অত্যাচার হয়। এক বা দুইজন টাকা চাইতে আসে, আর বাকিরা দল ধরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন যত ইচ্ছা টাকা দাবি করে, না দিলে মারধরও করে।

বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হকারদের ওপর এভাবে জুলুম করা হচ্ছে। বিষয়টি জানানোর জন্য জবি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অনেকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি। এরপর গত ১৫ দিন আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতিকে বিষয়টি জানালে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। কিন্তু এখনও আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল হাশিম কবির বলেন, কিছুদিন আগে সদরঘাট এলাকায় আমরা একটা প্রোগ্রাম করি। সেখানে ওই এলাকার হকাররা আমাদেরকে বিষয়টি জানায়। আমরা বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। 

অভিযোগের বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন বলেন, একটা অভিযোগ দিয়ে চিঠি দিয়ে দিলেই হলো নাকি? চাঁদাবাজির কোনো ভিডিও, রেকর্ডিং তো নেই। এসব মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে শুধু ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করতে চাচ্ছে। আর তারা যদি আমাদের কারও প্রতি চাঁদাবাজির প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি বলেন, কেউ যদি জবি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তুলে তাহলে এর দায়ভার আমরা নেব না। ক্যাম্পাসের আশপাশে আমাদের কোনো কর্মী চাঁদাবাজি করে না, আর ছাত্রলীগে চাঁদাবাজির কোনো জায়গা নেই।

এমএল/কেএ