পুকুর খননে মিলল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
পুকুর খনন করে পাওয়া গেল প্রাচীন কাঠের একটি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন
পুকুর খনন করে প্রাচীন কাঠের একটি প্রত্নতত্ত্ব স্তম্ভ উদ্ধার করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হান। গত শুক্রবার (১৯ মার্চ) কুমিল্লার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান পরিচালনা করার সময় এলাকাবাসী একটি পুকুর খনন করতে গেলে এ স্তম্ভটি নজরে আসে। পরে এটি উদ্ধার করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
২০২০-২১ অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ‘ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন অব আর্কিওলজিকাল রিমেইন্স: এন এক্সপ্লোরাটোরি রিসার্চ ইন পাঁচথুবী অ্যান্ড সারাউন্ডিং রিজিয়নস অব কুমিল্লা’ এর অংশ হিসেবে প্রত্নতাত্ত্বিক এ নিদর্শন উদ্ধার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রায় ১৪ ফুট দীর্ঘ কাঠের স্তম্ভটিতে সুন্দর কারুকার্য রয়েছে। এর কিছু অংশে নীল রঙের আস্তরণ দেখে অনুমান করা হয়, স্তম্ভটিতে নীল রঙের প্রলেপ ছিল। এছাড়া গবেষণা করলে এই নিদর্শন থেকে এ অঞ্চলের ইট ও কাঠের সমন্বয়ে নির্মিত স্থাপত্যের নানা দিকসহ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যেতে পারে।
নিদর্শনটি উদ্ধারকারী গবেষক ও শিক্ষক মুর্শেদ রায়হানের দাবি, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণত প্রাচীন কাঠের নিদর্শন টিকে থাকে না বলে দেশের খুব কম স্থান থেকে এ ধরনের কাঠের নিদর্শন পাওয়া গেছে। তাই এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘এটি এক চমৎকার মিউজিয়াম অবজেক্ট। এর সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে কুবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জাদুঘর স্থাপিত হলে সেখানে এটিকে প্রদর্শন করা সম্ভব হবে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা ‘কনজারভেশন অ্যান্ড রিস্টোরেশন অব আর্কিওলজিকাল রিমেইনস, মিউজিয়াম স্টাডিজ অ্যান্ড হেরিটেজ মেনেজমেন্ট’ কোর্সের অংশ হিসেবে ‘উড কনজারভেশন’র বিষয়টি হাতে-কলমে শিখতে পারবে।’
অপরদিকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শনকে সংরক্ষণ করতে না পারাটা প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় একটি বিশাল ব্যর্থতা হিসেবে পরিগণিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
সংরক্ষণের বিষয়ে এই প্রত্নতত্ত্ববিদ বলেন, ‘কাঠের নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন কেমিকেল ট্রিটমেন্ট। রাসায়নিকসমূহের বাজার দরের উপর নির্ভর করে জন্য প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট সহযোগিতা চেয়ে প্রকল্প দাখিল করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
বর্তমানে প্রাচীন এ কাঠের স্তম্ভটির প্রয়োজনীয় আদ্র পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য চটের বস্তা মুড়িয়ে নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি দিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে; যাতে কাঠের আদ্রতা হ্রাস পেয়ে এটিতে ফাটল তৈরি না হয়। সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড পাওয়া পর্যন্ত স্তম্ভটিকে পুনরায় মাটিচাপা দিয়ে জলাবদ্ধ পরিবেশ তৈরি করে সাময়িক সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হবে।
তবে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না বলে আক্ষেপ করেছেন এ গবেষক। তিনি বলেন, ‘প্রত্নস্থান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে ও অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির ফলে প্রত্নস্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।’
রাষ্ট্রের এ অমূল্য নিদর্শনগুলো টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং পদ্ধতিগত প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান। এজন্য স্থানীয় জনগণকে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে সচেতন করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মুর্শেদ রায়হানের এ গবেষণা প্রকল্পের আওতায় পাঁচথুবী ইউনিয়নে পরিচালিত সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে কাঠের স্তম্ভ ছাড়াও কিছু নতুন প্রত্নস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। এসব প্রত্নস্থানে ইটনির্মিত অবকাঠামো থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।অন্যান্য প্রত্নবস্তু হিসেবে প্রত্নস্থানসমূহ থেকে মৃৎপাত্র ও অন্যান্য নিদর্শনও সংগৃহীত হচ্ছে।
এমএসআর