‘পড়তে বসলেই বিদ্যুৎ চলে চলে যায়। পড়াশোনায় মনোযোগ দিতেই পারছি না। সামনে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা। পড়াশোনা করতে না পারলে কীভাবে পরীক্ষায় ভালো করবো?’ কথাগুলো বলছিলেন চাকরি প্রত্যাশী মাইনুল ইসলাম। সম্প্রতি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তিনি।

এ সমস্যা শুধু মাইনুল ইসলামের একার নয়। রংপুরে অবস্থান করা প্রতিটি শিক্ষার্থী এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনা, গোসল, খাওয়া দাওয়া, ঘুম, ক্লাস-পরীক্ষা, ল্যাব কোনো কিছুই ঠিক মতো করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এতে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

মাইনুল ইসলাম বলেন, গত ঈদের পর থেকে লক্ষ্য করতেছি রংপুরে নিয়মিত বিদ্যুৎ থাকে না। দিন ও রাতের অধিকাংশ সময়ই বেরোবি ক্যাম্পাস, আবাসিক হল ও আশপাশের পুরো এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পরে। এদিকে আবহাওয়াও প্রচন্ড গরম। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্যান চলে না, লাইট জ্বলে না। বাধ্য হয়ে গরমে ঘেমে গেলেও মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এদিকে অনেকগুলো চাকরির পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঠিকমতো পড়াশোনা করতে না পারলে অস্থিরতা কাজ করে।

বিদ্যুৎ না থাকায় পুরাতন মোবাইল এর ব্যাটারি দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে স্বল্প আলোতে পড়তেছিলেন বেরোবি লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সিহাব মন্ডল। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ নেই তাই মোবাইল ব্যাটারি দিয়ে লাইট বানিয়ে পড়াশোনা করছি। আমাদের ক্যাম্পাসে দিনের বেশির ভাগ সময়ে বিদ্যুৎ থাকে না। রাতেও থাকে না। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এতে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারি না। ঠিকমতো খাইতে পারি না। এমনকি ভালোভাবে ঘুমাতেও পারছি না। এতে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা চাই যেন ক্যাম্পাসে আবাসিক হলে জেনারেটর বা বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে আমরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারি।

মোমবাতির আলোয় শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ডাইনিংয়ে বসে খাবার খাচ্ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ঘেমে ঘেমে খাইতেছি। এমন অসহনীয় গরম যে খাইতেও কষ্ট হয়। সন্ধ্যা হলেই ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা ঠিকমতো পড়তেও পারি না। সামনে বিসিএসসহ অনেক পরীক্ষা আছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি থাকবে দ্রুত যেন এ বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করা হয়।

লোক প্রশাসন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল হাসান সাকিব বলেন, আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি। কিছুদিন থেকে দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে গরমে ঠিকমতো পড়াশোনাও করা যাচ্ছে না।

রংপুর নেসকো বিদ্যুৎ বিতরণ অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম, তাই একসঙ্গে সব জায়গায় বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরবরাহ বাড়লে এ সমস্যা সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়তে পারে।

শিপন তালুকদার/এবিএস