বিদেশি শিক্ষার্থীরা

সেশনজট, শিক্ষক রাজনীতি, আবাসন সংকট, অনুন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, সার্কুলার প্রকাশে বিলম্বসহ নানা কারণে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। 

ভৌগোলিক কারণে নেপালের শিক্ষার্থীরা হাবিপ্রবিতে পড়তে আগ্রহী হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত ১৭তম ব্যাচের নেপালি শিক্ষার্থী ব্রীজ কিশোর ইয়াদাভ বলেন, ‌‘কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মাঝে আমাদের সম্মান ডিগ্রি প্রদান করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অনেক শিক্ষার্থী হাবিপ্রবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারেনি।’

সুরাজ কুমার সাহা নামের আরেক বিদেশি শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কমপক্ষে ছয় মাস আগে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকায় অল্প সময়ে অনেক শিক্ষার্থী আসতে পারে না। বিগত সময়ে দেখা যায়, বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আসতে আসতে প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী হাবিপ্রবিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ২০১৪ সালে ভর্তি হয় মোট ২২ জন, ২০১৫ সালে ৪২, ২০১৬ সালে ৫৯, ২০১৭ সালে ৬১, ২০১৮ সালে ৬১, ২০১৯ সালে ২৫ এবং ২০২০ সালে ৪ জন শিক্ষার্থী।

ইন্টারন্যাশনাল হলের সুপার সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন জানান, ‘ছেলেদের হলে সর্বোচ্চ ১৪০ জন থাকতে পারবে, যদিও বর্তমানে ১০৫ জন ছাত্র রয়েছে। তবে এক দেশের শিক্ষার্থী অন্যদেশের শিক্ষার্থীর সঙ্গে রুম শেয়ার করতে চায় না। এমনকি তারা একটি রুমে একজন করে থাকতে চায়। তবে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পূর্বে তাদের যোগ্যতা যাচাই করা উচিত। কারণ কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে; যারা কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখে না।’

তবে ছেলেদের মতো মেয়েদের হলে এমন সমস্যা নেই বলে জানা যায়। বর্তমানে ৩৫ জন বিদেশি ছাত্রী হাবিপ্রবিতে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সুপার অধ্যাপক ড. মো. আবু সাঈদ। 

হাবিপ্রবি প্রশাসন বিগত সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুনাম অর্জন করলেও সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরো ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশনের জন্য নেই কোনো অফিস রুম। এমনকি নেই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। ২০১৩ সাল থেকে অধ্যাপক ড. বিকাশ চন্দ্র সরকারকে উক্ত শাখার ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ড. বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ইউজিসি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে আমাদের সবসময় উৎসাহ দিয়ে আসছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব, যাতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সার্কুলার দেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সার্কুলারের কয়েক মাস আগেই প্রকাশ করা হয়। এতে করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সুবিধা হয়। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স শাখার জন্য পৃথম অফিস রুম ও জনবল সংকট নিরসনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে কি না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছর সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে প্রত্যেক বিদেশি শিক্ষার্থীকে হলে ভর্তি হতে হয়। ওয়াইফাই সুবিধা, বাবুর্চি খরচসহ অন্য সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এছাড়া অতিরিক্ত কোনো অর্থই নেওয়া হয় না।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার (রুটিন দায়িত্ব) বলেন, ‘করোনার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যেতে পারে। তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক একটি ইন্টারন্যাশনাল হল তৈরি করা। আর আবাসন সংকট না থাকলে এমনিতেই অনেক শিক্ষার্থী হাবিপ্রবিতে পড়তে আগ্রহী হবে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশিদের মতো বিদেশিদেরও যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বৃত্তির আওতায় আনা হয় এ মর্মে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন হাবিপ্রবির ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

ইউজিসির ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর দিক দিয়ে হাবিপ্রবি দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। এ মুহূর্তে ১৩৮ জন শিক্ষার্থী হাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত রয়েছে। 

এমএসআর