অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম

দুই মেয়াদের শেষ সময়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে তাড়াহুড়ো শুরু করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। মেয়াদের শেষ বছরের শুরুতেই অন্তত ৪৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ জন শিক্ষক এবং ১০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।

এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দিতেই এসব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণ কিংবা পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করতেই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। প্রশ্ন উঠেছে, জাবি ভিসি কি শেষ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের পথেই হাঁটছেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মে অস্থায়ী ভিত্তিতে ১১ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং দুজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় এবং ১১ ফেব্রুয়ারি আরেক বিজ্ঞপ্তিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগে ২৬ জন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ থাকাকালীন এত নিয়োগ দিয়ে মূলত প্রশাসন পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে দলীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, মহামারিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা নিয়োগের কোনো যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা নেই। এ সময় নিয়োগ আহ্বান করা হলে অনেক যোগ্য প্রার্থী সুযোগ পাবে না। বর্তমান প্রশাসন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের সুযোগ বৃদ্ধির জন্যই মূলত এ ধরনের কাজ করছে।

অধ্যাপক খবির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, মহামারির মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং (আইআরএস) এর দুবার স্থগিতকৃত নিয়োগ বোর্ড পুনরায় বসিয়ে তাদের পছন্দমতো একজনকে প্রভাষক বানিয়েছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছিলাম। বর্তমান অবস্থায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে না এলে নিয়োগ কার্যক্রম চালানো ঠিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, উপাচার্য দুই মেয়াদের শেষ বছরে পদার্পণ করেছেন। এর আগে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। এ অবস্থায় কোনো ধরনের অস্বাভাবিক নিয়োগ কাম্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি চালু হয়নি, এই অবস্থায় এত লোকবলের দরকার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক হলে, সামনাসামনি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যথাযথ নিয়ম-কানুন মেনে নিয়োগ কার্যক্রম চালু করার উচিত। নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন না মানার কারণ হলো কোনো না কোনো উদ্দেশ্য সাধন করা। আমরা চাই সব নিয়ম-কানুন মেনে নিয়োগ হোক।

তিনি বলেন, যেহেতু উপাচার্য এবং যারা ক্ষমতাবান তারা সরকারের আশির্বাদপুষ্ট, সেহেতু পারস্পরিক স্বার্থের কারণে এসব নিয়োগ দেয়। যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পড়ে যায়। সেটিই আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পাচ্ছি।

শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালেয়ের কোনো শিক্ষক কিংবা কর্মচারী নিয়োগ করার ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখা, দরকার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্পদ হবেন নাকি ক্ষতিকর হবেন? তবে দেশের সার্বিক অবস্থার কথা ভেবে এই চাওয়াটা বেশ বড়। দলের অনুগতদের নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্টরা উঠে পড়ে লেগেছে।

তিনি বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে উপেক্ষা করে নিম্নমানের ব্যক্তিদের বাছাই করা হচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমছে, শিক্ষার মান কমছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. দিল আফরোজা বলেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২-৩টি পদ খালি আছে। কোথা থেকে এতগুলো পদে একসঙ্গে লোক নেওয়া হচ্ছে এটা নিয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব।

এসপি/এনএ