সাতক্ষীরায় পাঁচ বছরের শিশু আলিফ ফারহাদকে নির্মমভাবে হত্যাচেষ্টার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় দুজনকে আসামি করে মামলা করলে পুলিশ দেবর-ভাবিকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা গ্রামের আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী রানী বেগম (২২) ও ছোট ভাই আশিকুজ্জামান ইমন (১৬)।

এদিকে শিশুটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকটিও আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নির্মম নির্যাতনের শিকার শিশু আলিফ ফারহান চরবালিথা গ্রামের মঈনুদ্দীন সরদারের প্রথম স্ত্রীর ছেলে। সম্পর্কে আশিকুজ্জামান ইমন ও রানী বেগমের ভাগনে।

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ্ জানান, শিশুটির দুই চোখে চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, ঠোঁট কেটে ও গলায় চাকু দিয়ে জখম করা হয়েছে। নির্মমভাবে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি আমাদের মনকে নাড়া দিয়েছে। তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করার পর থেকেই মাঠে নামে পুলিশ।

তিনি বলেন, তদন্তের পর আটক করা হয় শিশুর মামি রানী বেগমকে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয় শিশুর ছোট মামা আশিকুজ্জামানকে। মূলত আশিকুজ্জামানের বড় ভাই আশরাফুজ্জামান লিমন ঢাকায় থাকেন। সেই সুযোগে দেবর ও ভাবির মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরের দিকে তারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। বিষয়টি শিশু আলিফ দেখে ফেলে। এরপরই তারা শিশুটিকে মেরে ফেলার চিন্তা করে।

ওসি আরও জানান, এরপর ঘরের মধ্যে শিশুটিকে হাত-পা বেঁধে চোখ, মুখ, ঠোঁট ও গলায় নির্মমভাবে চাকু দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন রানী বেগম ও আশিকুজ্জামান। পরে মৃত ভেবে বাড়ির পাশে ফেলে দেয়। দেড় ঘণ্টা পর নাটকীয়ভাবে শিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় আশিকুজ্জামান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার বিস্তারিত পুলিশকে জানিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বেলা ৩টার দিকে হত্যাচেষ্টাকারী দেবর-ভাবিকে সাতক্ষীরা আদালতে পাঠায় দেবহাটা থানা পুলিশ। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এই দুই আসামি।

শিশুটির বাবা মঈনুদ্দীন সরদার বলেন, আমার প্রথম স্ত্রী শারমীন সুলতানা মারা যাওয়ার পরে ফারহান একই গ্রামে তার নানি সকিনা খাতুনের কাছে থাকতেন। সৎমায়ের অত্যাচার ছেলেটাকে যেন সইতে না হয়, সে জন্য নানির কাছে রেখেছিলাম। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটবে, আমি জানতাম না।

তিনি বলেন, ডাক্তার জানিয়েছে ডান চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁ চোখটিও ভালো হবে কি না ৭২ ঘণ্টা পর চিকিৎসক জানাবেন। ছেলেটির এখনো জ্ঞান ফেরেনি। কীভাবে নির্যাতন করতে পারল তারা! কোনো বিবেকবান মানুষ শিশুর সঙ্গে এমন করতে পারে না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আকরামুল ইসলাম/এনএ