চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে ছিটকে পড়ে ট্রাক্টর

কিশোরগঞ্জের মানিকখালী রেল স্টেশনের দক্ষিণে একটি লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রাক্টর আটকে যায়। এ সময় বিকল ট্রাক্টরকে ধাক্কা দেয় চলন্ত আন্তঃনগর কিশোরগঞ্জ এক্সেপ্রেস ট্রেন। এতে ট্রাক্টরটি দুই ভাগ হয়ে ছিটকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় ট্রেনটি মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানা পুলিশ জানায়, ট্রেনটি নির্বিঘ্নে যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ পৌঁছলেও এর ইঞ্জিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ নিহত হয়নি। তবে ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীদের কেউ কেউ সামান্য আহত হয়। ট্রেনটি ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিল।

ট্রেনে থাকা গোলাম মোস্তফা নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ট্রেনটি যখন ট্রাক্টরকে সজোরে ধাক্কা মারে তখন বগিটি কিছুটা উপরে ওঠে পড়ে এবং প্রচণ্ড রকম ধাক্কা লাগে। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ছিটকে পড়ে যান। এতে অনেকে আহত হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক জানান, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে, সেটি অবৈধ লেভেলক্রসিং। ক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রাক্টরের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ঠিক তখন আন্তঃনগর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন চলে আসে। ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাক্টরটি দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে ছিটকে যায়। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় যাত্রীরা। এ ব্যাপারে একটি জিডি করা হয়েছে।

রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পিডব্লিওআইয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. আনিসুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার কারণে রেললাইন সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এগুলো সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করা হয়। অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, বোকাইনগর থেকে ভৈরব পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এ রেলপথে মোট লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১৩৯টি। এরমধ্যে বেশিরভাগ ক্রসিংয়েই নেই কোনো গেট ও গেটম্যান। আর এসব অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ের পাশেই রয়েছে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ ও হাটবাজার।

কিন্তু কোনো গেট ও গেটম্যান না থাকায় এসব ক্রসিং এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। শুধু ‘সামনে লেভেলক্রসিং, সাবধানে চলাচল করুন’ সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টাঙিয়েই নিরাপত্তা ঝুঁকির দায় এড়াচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।

২০১৯ সালে এ রেলপথের অরক্ষিত লেভেলক্রসিং এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ৩৯ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শুধু কিশোরগঞ্জ জিআরপির নিয়ন্ত্রণাধীন বোকাইনগর থেকে গচিহাটা পর্যন্ত রেলপথেই ২১ জনের মৃত্যু হয়। অন্য ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার গচিহাটা থেকে ভৈরব পর্যন্ত রেলপথ এলাকায়।

এসকে রাসেল/এমএসআর