ধানখেতে পানি না পেয়ে বিষপান করা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষক রবি মার্ডি (৩০) মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে তিনি মারা যান।

রবি মার্ডি জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নবাই বটতলা নিমঘুটু এলাকার গয়ানাথ মার্ডির ছেলে।

গত বুধবার (২৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রামেক হাসপাতালে নেন স্বজনরা। এরপর থেকেই তিনি হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই মারা যান এ কৃষক।

রামেক পুলিশ বক্সের ইনচার্জ মুকুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিষক্রিয়া নিয়ে ওই কৃষক হাসপাতালে ভর্তি 
 হয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তিনি মারা গেছেন। পরে মরদেহ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ধানখেতে পানি না পেয়ে ক্ষোভে গত ২৩ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিষপান করেন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর কৃষক রবি মার্ডি ও তার চাচাতো ভাই অভিনাথ মার্ডি (৩০)। ওই দিন রাতেই নিজ বাড়িতে মারা যান অভিনাথ। নিহত অভিনাথ মার্ডি নিমঘুটু গ্রামের বাবু চাঁদ মার্ডির ছেলে। গুরুতর অসুস্থ রবিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, দেওপাড়ার ঈশ্বরীপুর ব্লকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের সেচের আওতায় ধানচাষ করেন কৃষক অভিনাথ ও রবি। চলমান খরায় তাদের ধানক্ষেত ফেটে চৌচির। 
কিন্তু গভীর নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সেচের পানি দিতে তালবাহানা করছিলেন। সিরিয়ালের নামে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তাদের ঘুরাচ্ছিলেন। ওই গভীর নলকূপে সেচ ক্ষমতার অতিরিক্ত জমিতে ধানচাষ হওয়ায় ফসল বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা।

খেতের ফসল রক্ষায় ২৩ মার্চ ফের অপারেটরের কাছে যান অভিনাথ ও রবি। কিন্তু অপারেটর আবারও সিরিয়ালের নামে তাদের ফিরিয়ে দেন। ক্ষোভে সেখানেই বিষপান করেন দুই কৃষক। পরে তাদের ভ্যানে তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়ি ফিরে গিয়ে রাতে মারা যান অভিনাথ। 

পর দিন পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামেক মর্গে পাঠায়। এই ঘটনায় স্বজনরা গভীর নলকূপ অপারেটরকে দায়ী করলেও বিএমডিএ এবং থানা পুলিশ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছিল শুরু থেকেই।

প্রথমে পুলিশ ইউডি মামলা নেয়। তাতে বাদী করা হয় নিহত অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রমকে। মামলা সাজাতে বৃহস্পতিবার দুপুরেই পুলিশ রোজিনার বাড়িতে গিয়ে সাদা কাগজে তার স্বাক্ষর নিয়ে আসে বলে জানিয়েছে পরিবার। 
 
থানা পুলিশের কাণ্ডে আপত্তি জানান রোজিনা। শেষে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার হস্তক্ষেপে শুক্রবার রাতে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা নেয় পুলিশ। 

এদিকে শুক্রবার সকালে ওই এলাকায় ছিলেন অভিযুক্ত অপারেটর শাখাওয়াত হোসেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, শাখাওয়াত নিরুদ্দেশ। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। চিকিৎসাধীন রবি মার্ডির মৃত্যুও একই মামলায় থাকবে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসকেডি