ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে এবং জোর করে ভোট নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ভোট না দিয়ে কেন্দ্র থেকে ফিরে গেছেন। রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভোটগ্রহণ চলাকালে আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রাম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এসব অভিযোগ করেন ভোটাররা।

এছাড়া ওই কেন্দ্রের ছবি তুলতে সাংবাদিকদের বাধা দিয়েছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কামাল আহাম্মদ খান।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেবগ্রাম কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবকটি বুথেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্টরা নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে বেশ কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করেন। এছাড়াও দুইজন ভোটার কেন্দ্রে গিয়েও তাদের ভোট দিতে পারেননি। কেন্দ্রে যাওয়ার পর নৌকার এজেন্টরা তাদের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন।

দেবগ্রাম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, আমি চট্টগ্রামে চাকরি করি। শুধুমাত্র ভোট দেয়ার জন্য গ্রামে এসেছি। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর তারা (নৌকার এজেন্ট) বলছে- আমাদের এই প্রতীকটায় আপনার ভোটটা দিতে হবে। পরে ভোট না দিয়েই ফিরে আসছি। আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক, আমার যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবো।

কোহিনুর আমিন নামে আরেক ভোটার জানান, কেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমার ভোট আগেই দিয়ে দিয়েছে। আমার আঙ্গুল আছে, আমার অধিকার আমার ভোট আমি দিব। আমি তো বলিনি আমার আঙ্গুল নেই, আমি ভোট দিতে পারবো না।

একই কেন্দ্রের ভোটার আলামিন খান বলেন, আমি ফিঙ্গার দেয়ার পর বলা হয় আমার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এটা কোনো কথা হলো? এজন্য আওয়ামী লীগ করি? আমি ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি, যুবলীগেরর বর্তমান আহ্বায়ক সদস্য। আমার চেয়ে বড় আওয়ামী লীগ কে আছে এই গ্রামে?

এদিকে কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে ভোট নেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছবি নিতে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কামাল আহাম্মদ খান। তিনি সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি বলেন, কোনো বুথেই প্রকাশ্যে ভোট দেয়া হচ্ছে না। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।

আখাউড়া পৌরসভার মোট ১১টি কেন্দ্রের সবকটিতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলছে। নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাহার ৯০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ২৩০ জন ও নারী ভোটার ১৪ হাজার ৬৭২ জন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে দেশের ২৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ৬১ পৌরসভায় ও তৃতীয় ধাপে ৬২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপে দেশের ৩১টি পৌরসভায় নির্বাচন হবে।

তিন ধাপে আওয়ামী লীগের ৬৯ জন, বিএনপির ৯ জন ও স্বতন্ত্র ২৫ জন প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে মেয়র পদে তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৬ জন, বিএনপির তিনজন ও স্বতন্ত্র ১৪ জন বিজয়ী হন।

দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন, বিএনপির চারজন, জাতীয় পার্টির একজন, জাসদের একজন ও আটজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।

প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন, বিএনপির ধানের শীষের দুইজন এবং তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন। 

আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর