ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষটিকে ফুলের ক্রাউন পরিয়ে দিচ্ছেন এক প্রেমিক

প্রতিটি লাল গোলাপ ১০০ টাকা। দাম শুনে চোখ কপালে উঠলেও কিনছেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। বগুড়ার ফুল মার্কেটে এবার ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে থেকে এসেছে থাই গোলাপ।

সাধারণ যেকোনো দিন গোলাপের দাম ১০-১৫ টাকা ঊর্ধ্বে ২০ টাকা। কিন্তু রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসার ও বসন্তের প্রথম দিনে সকাল থেকে গোলাপের দাম আকাশচুম্বী। একেকটি থাই গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা।

পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বগুড়া ফুল মার্কেটে আকারভেদে প্রতিটি থাই গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১৫০ টাকা। তবে ১০০ টাকার থাই গোলাপের চাহিদা বেশি। 

বগুড়ার শহীদ খোকন শিশু উদ্যান সংলগ্ন (খোকন পার্ক) ফুল মার্কেটে ১৭টি ফুলের দোকান রয়েছে। এখানকার দোকানগুলোতে সারা বছর যে পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়, তার এক তৃতীয়াংশ ফুল বিক্রি হয় বিভিন্ন উৎসবে। শনিবার রাত থেকে ফুল বিক্রি চলছে। চলবে গভীর রাত পর্যন্ত।

সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, পয়লা বৈশাখ, বসন্তের আগমনে পয়লা ফাল্গুন ও ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসসহ বিভিন্ন উৎসবে সবচেয়ে বেশি ফুল বেচাকেনা হয়। এসব দিবসের বাইরে গায়ে হলুদ, বিয়ে ও হালখাতায় ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এমনটা জানালেন বগুড়া ফুল মার্কেট ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ দাস।

লক্ষ্মণ দাস বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এবার ফুল মার্কেটে বিগত বছরের তুলনায় কম ফুল এসেছে। আগে বগুড়া থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে ফুল সরবরাহ করা হতো। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার খুব অল্প সংখ্যক ফুল বাইরে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া ফুল মার্কেটে সবচেয়ে বেশি ফুল আসে যশোরের গদখালি, কালীগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ঢাকা থেকে। তবে এবার প্রথমবারের মতো ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে থেকে এসেছে থাই গোলাপ।

এবার বগুড়া ফুল মার্কেটে প্রতিটি দেশি গোলাপ ১৫-৩০ টাকা, চায়না গোলাপ ২৫-৫০ টাকা, মেরিন্ডি গোলাপ ৩০-৫০ টাকা, থাই গোলাপ ৮০-১৫০ টাকা, জারবেরা ২৫-৩০ টাকা, গ্লাডিওলাস ২৫-৩৫ টাকা, রজনীগন্ধা ১৫-২০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ১০ টাকা, গাঁদা ১০০ ফুল ১০০ টাকা, জিপসি ফুলের মুঠো ৫০-৮০ টাকা।

ফুল দিয়ে তৈরি মেয়েদের মাথার ক্রাউন প্রতিটি ১০০-২৫০ টাকা, হাত তোড়া আকারভেদে ১৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া পছন্দমতো তৈরি ফুলের তোড়া ও ক্রাউন পাওয়া যাচ্ছে ২০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায়।

পয়লা ফাল্গুনে বগুড়ায় বসন্ত উৎসবের র‌্যালি/ছবি: ঢাকা পোস্ট

এবার বগুড়া ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা প্রায় ১৩ লাখ টাকার ফুল কিনেছেন যশোরসহ দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে। এই ফুল তারা ২০ লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি করবেন দুদিনে। গত বছরের তুলনায় এবার করোনা পরিস্থিতিতে ফুলের আমদানি কম হওয়ায় বিক্রিও কম। গত বছর প্রায় ২৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে।

রোববার দুপুরে কথা হয় বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী কথা, স্বর্ণা, সৃষ্টি, ইশরাতের সঙ্গে। তারা চার বান্ধবী বাসন্তী সাজে ফুল মার্কেটে ফুল কিনতে এসেছেন। তাদের কাছে পয়লা ফাল্গুনের গুরুত্ব বেশি।

তারা জানালেন, ভালোবাসা দিনক্ষণ গুনে হয় না। ভালোবাসা ঐশ্বরিক বিষয়। আমরা বাঙালি, তাই বসন্ত আমাদের শিকড়ে বাঁধা।

একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিজান এসছেন সহপাঠী নুরীকে নিয়ে। মিজান ও নুরী সহপাঠী হলেও ভবিষ্যতে একসঙ্গে ঘর বাঁধতে চান। তাই ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষটিকে ফুলের ক্রাউন কিনে পরিয়ে দিলেন। করোনার সংক্রমণ এড়াতে দুজনই মাস্ক পরে ফুল মার্কেটে এসেছেন।

তারা জানালেন, করোনা পরিস্থিতিতে আগের মতো ক্যাম্পাসে আড্ডা হয় না। তবে ভালোবাসা দিবস তো আর করোনার কারণে থেমে থাকবে না। তাই মাস্ক পরেই ফুল কিনতে এসেছি।

বগুড়ার শাহ সুলতান কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল এসেছেন ফুল কিনতে। দাম শুনে চোখ কপালে উঠেছে তার। অবশেষে ২৫০ টাকা দিয়ে পাঁচটি গোলাপ কিনে বান্ধবীকে দিলেন তিনি।

ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ী মালেক, স্বপন ও শফিকুল জানান, সবচেয়ে বেশি ফুল কিনতে আসে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। কারণ তারা আবেগে ভাসে। আবেগ যার যত বেশি, তার ভালোবাসার পরিমাণ তত বেশি। প্রিয়জনের জন্য ফুলও কিনে বেশি। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ফুল কিনে বেশি।

তারা আরও জানান, করোনা পরিস্থিতিতে এবার ফুল বাজার চড়া, তাই আমদানি কম। গত বছর থাই গোলাপ আমদানি হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার পিস। এবার বেঙ্গালুরু থেকে মাত্র হাজার দুই হাজার পিস থাই গোলাপ আমদানি হয়েছে। তাই দামও বেশি। এবার থাই গোলাপের পিস ৮০-১৫০ টাকা। তবে দেশি গোলাপের দাম কম আছে।

সাখাওয়াত হোসেন জনি/এএম