ইয়াছিন মিজি

চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে চাকরির জন্য বিদেশে পাঠানোকে কেন্দ্র করে বড় ভাইয়ের স্ত্রী শারমীন আক্তারকে (২১) ছুরিকাঘাত করে হত্যার দায়ে দেবর ইয়াছিন মিজিকে (২২) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।

রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ এসএম জিয়াউর রহমান এই রায় দেন। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি ইয়াছিন সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর (মমিনপুর) গ্রামের মিজি বাড়ির আবদুর রহিম মাওলানার ছেলে। 

হত্যার শিকার শারমীন আক্তার আসামির বড় ভাই ইউসুফ মিজির স্ত্রী এবং ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর কেরোয়া পাটোয়ারী বাড়ির তাজুল ইসলামের মেয়ে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে শারমিন আক্তার ও ইউসুফের বিয়ে হয়। ইউসুফ সৌদিপ্রবাসী। বিয়ের পরে বিদেশে চলে যান। এরপরে ইউসুফের ছোট ভাই আসামি ইয়াছিন তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ভাই-ভাবিকে চাপ প্রয়োগ করেন। দীর্ঘ দিন তাকে বিদেশে না পাঠানোর কারণ হিসেবে ভাবিকে সন্দেহ করেন তিনি। ভাবির কারণেই তাকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে না।

২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ইয়াছিন তার বড় ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে কথা কাটাকাটির একপর্যায় হাতে থাকা ছুরি দিয়ে ভাবি শারমিনকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে শারমিনকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে শারমিনের বাবা তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং মেয়ের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে ইয়াছিন মিজিকে আসামি করে চাঁদপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ আসামি ইয়াছিনকে গ্রেপ্তার করেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার তৎকালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম তদন্ত শেষে ওই বছর ৩০ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মোক্তার আহমেদ অভি বলেন, তিন বছরের অধিক সময় মামলাটি চলমান অবস্থায় ১৮জন সাক্ষীর মধ্যে আসামির বাবা, মাতা ও বোনসহ ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্য প্রমাণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মাসুম ভুঁইয়া ও সফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া। মামলার বাদী তাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার পাইনি। আমি ন্যয় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাব।’

শরীফুল ইসলাম/এমএসআর