৩৫ দিন বন্ধ থাকার পর নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ-শরীয়তপুর রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রী ও লঞ্চ শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) রোববার (২৪ এপ্রিল) থেকে লঞ্চ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। 

এর আগে লঞ্চ চালুর দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলন করে আসছিল শ্রমিক ও কর্মচারীরা। রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুই রুটে ১৮টি লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। ১৮টি লঞ্চের মধ্যে ১৫টি চাঁদপুর রুটের এবং তিনটি হোমনা-রামচন্দ্রপুর, ওয়াবদা, সুরেশ্বর-নরিয়া (শরীয়তপুর) রুটের। তবে বন্ধ থাকছে মুন্সীগঞ্জ ও মতলব-মাছুয়াখালী রুটের লঞ্চ চলাচল।

জানা গেছে, গত ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচ রুটে চলাচলকারী ৭০টি লঞ্চ বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এ ঘটনার চার দিন পরে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ নৌপথে একটি সি-ট্রাক চালু করা হয়। নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে ঢাকা থেকে আগত দুটি লঞ্চ চালু করা হয়। আর নারায়ণগঞ্জের ছোট লঞ্চগুলো অনিরাপদ বলে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। 

এদিকে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরে যুক্ত শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা না করে হঠাৎ করে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিক ও কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী যুক্ত। তাদের পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছিল। যার প্রেক্ষিতে শ্রমিক কর্মচারীরা বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে আন্দোলনে নামে। তারা গত ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে লঞ্চ চালুর দাবি জানানোর পাশাপাশি গত ১৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। 

পরে গত ২০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের বন্ধ হয়ে যাওয়া লঞ্চ চালুর দাবির প্রেক্ষিতে পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (মানব সম্পদ ও প্রশাসন) আবু জাফর হাওলাদার, নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল মতিন, নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও লঞ্চ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার জানান, শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ১৮টি লঞ্চ চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। এই লঞ্চগুলো হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর রুটে ১৫টি। বাকি ৩টি লঞ্চ হচ্ছে হোমনা-রামচন্দ্রপুর, ওয়াবদা, সুরেশ্বর-নরিয়া (শরীয়তপুর) রুটের। তবে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ রুটের ২৫টি ও মতলব-মাছুয়াখালী রুটের ১৯টি লঞ্চ চলাচল করবে না।

রাজু আহেমদ/আরএআর