রংপুরের পীরগঞ্জে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ থাকার তিন দিন পর এক স্কুলছাত্রের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বন্ধু ওমর ফারুক ওরফে সামিউলকে (১৩) আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের পালগড় গ্রামের একটি অগভীর নলকূপের ঘর থেকে পুলিশ সদস্যরা নিহতের লাশ উদ্ধার করে।

হত্যার শিকার তৌহিদুল ইসলাম নাহিফুল (১১) পীরগঞ্জের শাল্টি পশ্চিমপাড়া গ্রামের নুর আলমের ছেলে। নাহিফুল শাল্টি শমস দীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে সে ছিল দ্বিতীয়।
 
বুধবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান।

নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে এএসপি জানান, গত ২৪ এপ্রিল রোববার বিকেলে বন্ধু সামিউলের সঙ্গে ঘুরতে বের হন তৌহিদুল ইসলাম নাহিফুল। যাবার সময় নাহিফুল তার মায়ের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরদিন সকাল হয়ে গেলেও নাহিফুল বাড়িতে ফিরে না আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তার পরিবার। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও সন্ধান না পেয়ে নাহিফুলের বাবা নুর আলম পীরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

নিখোঁজ নাহিফুলের সন্ধানে মাঠে নেমে ২৬ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে সন্দেহভাজন আচরণের কারণে তার বন্ধু সামিউলকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অল্প সময়ের মধ্যেই নাহিফুল হত্যা মামলার ক্লু উদঘাটন হয়। ওইদিন রাতেই
সামিউলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বাবার শ্যালো মেশিনের ঘর থেকে গর্তে পুঁতে রাখা অর্ধগলিত লাশ উত্তোলন করা হয়। এ সময় নাহিফুলের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হাতঘড়ি, মানিব্যাগ এবং ৮৯০ টাকা জব্দ করা হয়।

কামরুজ্জামান আরও জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নাহিফুল তার বন্ধু সামিউলের সঙ্গে পালগড় মাদরাসায় যান। সেখানে টাকা দিয়ে খোলা খেলা দেখে। এরপর তারা দুইজন মিলে কলোনি বাজারে গিয়ে খিচুড়ি খায়। খিচুড়ি খাওয়া শেষে নাহিউল টাকা দিতে মানিব্যাগ বের করলে সামিউল সে টাকাগুলো কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মোতাবেক ওই দিন রাতে নাহিফুলকে সঙ্গে নিয়ে সামিউল তাদের শ্যালো মেশিন ঘরে যায়। সেখানে কৌশলে নাহিফুলকে নেশাজাতীয় একটি খাবার দিয়ে অচেতন করে। পরে মেশিন ঘরে থাকা ফিতা দিয়ে নাহিফুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মানিব্যাগে থাকা ৮৯০ টাকা ও হাতঘড়ি নেয়। এরপর শ্যালো মেশিন ঘরে থাকা কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়ে নাহিফুলের লাশ গর্তে মাটি চাপা দেয়। পরদিন সকালে সামিউল বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা নুর আলম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় আটক সামিউলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সামিউল একই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। সে পরিবারের তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আর স্কুলে ভর্তি হয়নি। এর মধ্যে সে নেশায় জড়িয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রকৃত হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সামিউল স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই