মাঠে মাঠে পাকতে শুরু করেছে ধান। এমন সময় কালবৈশাখী। এতে গাছগুলো নুড়ে পড়েছে খেতে। এখন সেই ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। কিন্তু নুয়ে পড়া ধান কাটতে চড়া মজুরিতে বিঘাপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এতে লোকসানে পড়বেন বলে জানান কৃষকরা।

সরেজমিনে জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে দেখা যায়, অধিকাংশ খেতের ধান গাছ নুড়ে পড়েছে। আবার কোনো খেতে ধান পানিতে আছে। এমন অবস্থায় কৃষকরা ধান কাটা শ্রমিক দিয়ে পানিতে থাকা ধান ঘরে তুলছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির প্রভাবে পাকা ও আধা পাকা ধানের গাছ জমিতে নুয়ে পড়েছে। কিছু নিচু জমিতে এখনো পানি জমে আছে। তাই ধান কেটে নিতে হচ্ছে চড়া দামে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘা ধান কাটা যেত ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এখন সেই ধান কাটাতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এখন প্রতি বিঘা ধান কেটে নিতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। এবার ধানে লোকসান গুনতে হবে জানান কৃষকরা।

এদিকে ধানকাটা শ্রমিকরা জানান, বেশি দামে ধান কেটেও লাভ হচ্ছে না তাদের। ধান গাছ নুয়ে না পড়লে এবং জমিতে পানি না জমে থাকলে দেড় বিঘার পরিশ্রমের সময়ে তারা তিন বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করতে পারতেন।

আট বিঘা জমির পাঁচ বিঘা জমি বর্গা রেখেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমরগ্রামের কৃষক কাউছার রহমান। তিনি বলেন, আমার বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের বোরো ধান জিরাশাইল চাষ করেছি। এক সপ্তাহ আগে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর কারণে পাকা ধানগাছ জমিতে নুয়ে পড়ছে। পাঁচ হাজার টাকা বিঘা দরে ধানগুলো শ্রমিকদের থেকে কেটে নিচ্ছেন তিনি।

নীলফামারী জেলার ডোমার থেকে আসা শ্রমিক দলের সরদার মোসলেম উদ্দিন বলেন, জমির ধান নুয়ে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না। তাই ৫ হাজার টাকা বিঘা দরে ধান কেটেও পড়তা (লাভ) পড়ছে না। তবুও ধান কাটা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে এবার ৬৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর। এরই মধ্যে গত ২৯ এপ্রিল রাত সোয়া ৯টা থেকে শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে ঝড় বয়ে যায়। এর বেশি সময় ধরে হয়েছে বৃষ্টি। এতে ১৫ হাজার ৯৬২ হেক্টর বোরোধান খেত আক্রান্ত হয়েছে। অধিকাংশ খেতের ধানগাছ হেলে পড়েছে।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ পর্যন্ত কী পরিমাণ আগাম জাতের বোরো ধান কাটা-মাড়াই করা হয়েছে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই তা নির্ধারণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিন আগে যে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির প্রভাবে পুরো জেলায় প্রায় ১৫ হাজার ৯৬২ হেক্টর বোরোধান খেত আক্রান্ত হয়েছে এবং ২১৩ হেক্টর বোরো ধান খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফসল উৎপাদনের ক্ষতি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

চম্পক কুমার/এনএ