‘আমি বারবার ছোট ছেলেকে বলছিলাম বাবা রাজিব, তুই আমাকে মারিস না। আমি তো তোর মা। কিন্তু ছেলে আমার কথা  শোনেনি। সে ও তার বউ এমনভাবে আমাকে মারল, আজ আমি হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছি।’

দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরানো অবস্থায় কেঁদে কেঁদে সাংবাদিকদের কথাগুলো বলেছিলেন বৃদ্ধ রেজিয়া বেগম (৮০)।

জমি লিখে না দেওয়ায় বৃদ্ধা মাকে এমন নির্যাতন করে দুই হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিজ ছোট ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছোট ছেলে রাজিব আলীকে মঙ্গলবার (৩ মে) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দিনাজপুর সদর উপজেলার বড়বন্দর নতুনপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার রাজিব আলী ডন নীলফামারীর সৈয়দপুরে ন্যাশনাল ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে চাকরিরত আছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জনা যায়, রেজিয়া বেগমের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। তার স্বামী ও বড় ছেলে মারা গেছেন অনেক আগে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলের এক সন্তানকে নিয়ে বড়বন্দর নতুনপাড়ার বাসায় থাকেন রেজিয়া বেগম। বেশ কিছুদিন ধরে ছোট ছেলে রাজীব মায়ের কাছে বসতবাড়ির ১৬ শতাংশ জমি লিখে নিতে চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু মা তাতে রাজি হচ্ছিলেন না।

ঈদের দিন (মঙ্গলবার) রাতে রাজীব ও তার স্ত্রী খালেদা মাকে জমি লিখে দিতে চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় রাজীব ও তার স্ত্রী মায়ের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন। যে লাঠির ওপর ভর করে তার মা চলাফেরা করেন, সেই লাঠি কেড়ে নিয়ে মাকে পেটাতে শুরু করেন রাজীব। লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন। নির্যাতন সইতে না পেরে মা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে এলে আবারও টেনেহিঁচড়ে বাড়িতে ঢুকিয়ে নির্যাতন করেন স্বামী-স্ত্রী।

এ সময় বৃদ্ধার দুই হাত ভেঙে যায়। মাথায় ও পায়ে আঘাত পান। পরে বৃদ্ধার নাতি লিমন তার ফুফুদের খবর দিলে তারা এসে মাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করান।

মেয়ে আঞ্জুমান আরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ভাই-বোন সবাই শিক্ষিত। কারণ আমার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। যে মা আমাদের এত কষ্ট করে মানুষ করলেন, সেই মাকে নির্যাতন করে দুই হাত ভেঙে দিল! তাহলে মা-বাবা এত কষ্ট করে শিক্ষিত করে কী করলেন? আমাদের পরিবারে এ ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমার বৃদ্ধা মায়ের ওপর নির্যাতনকারী আমার ছোট ভাই রাজীব ও তার বউয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

রেজিয়া বেগম আরও বলেন, যে ছেলেকে কষ্ট করে আদর-যত্ন দিয়ে মানুষ করেছি, সেই ছেলে মাকে নির্যাতনের ঘটনায় জেলে। আমি সমাজে আমার এ মুখ কেমন করে দেখাব? মানুষ তো আমাকে দেখে বলবে যে আমি ছেলের হাতে মাইর খাওয়া মা। আমার এ জীবন রেখে কী লাভ বলেন? বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো ছিল। ছেলের এমন সাজা চাই, যাতে কোনো মা যেন এমন নির্যাতনের শিকার না হয়।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বৃদ্ধা মাকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ পেয়ে ছেলে রাজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ইমরান আলী সোহাগ/এনএ